স্ট্রেস থেকে মুক্তি

Share

গত আর্টিকেলে আমরা জেনেছিলাম স্ট্রেস সম্পর্কে। স্ট্রেস হচ্ছে মানুষের অভ্যন্তরীণ এমন একটি ক্ষতিকারক অবস্থা যা কিনা শারীরিক চাহিদা কিংবা আশেপাশের পরিবেশ এবং সামাজিক পরিস্থিতির কারণে সৃষ্টি হয়ে থাকে। ব্যক্তি যদি স্ট্রেসের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে তবে সেটি ব্যক্তির শারীরিক এবং মানসিক উভয় ক্ষেত্রের জন্যই ক্ষতিকারক হিসেবে নিজেকে প্রকাশ করে। স্ট্রেস কে নিয়ন্ত্রণ করে কিংবা স্ট্রেসকে মানিয়ে চলার মাধ্যমে আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অনেকটাই চাপমুক্ত থাকতে পারি। প্রতিটি মানুষই ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে প্রতিনিয়ত স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। সাধারণত স্ট্রেসকে মানিয়ে চলার বিভিন্ন পদ্ধতিকেই আমরা স্ট্রেস কোপিং স্ট্র্যাটেজি বলে জানি।
স্ট্রেস বা দৈনন্দিন জীবনের চাপ মানিয়ে চলার বিভিন্ন উপায় রয়েছে যেমন: স্ট্রেসযুক্ত ঘটনাটির মুখোমুখি হওয়া, চাপযুক্ত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সমাধানের দায়িত্ব গ্রহণ করা, স্ট্রেসযুক্ত ঘটনা বা পরিস্থিতি কে এড়িয়ে চলা, সমস্যা সমাধানের কৌশল সম্পর্কে ভাবা এবং একই সাথে ইতিবাচক মনোভাবসম্পন্ন চিন্তা করা।


o ব্যক্তি স্ট্রেসযুক্ত অবস্থা থেকে দূরে না সরে যেয়ে ঘটনাটির মুখোমুখি হয় এবং সেটিকে এড়িয়ে না গিয়ে বরং আত্মনিয়ন্ত্রণ এর মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করে। স্ট্রেসযুক্ত সমস্যাটির সমাধান যখন ব্যক্তির একার পক্ষে করা সম্ভব না হয় কিংবা সামাজিক ভাবে একটি ভালো সমাধানের সম্ভাবনা থাকে তখন ব্যক্তি তার আশেপাশের মানুষের সাহায্য চায়। সামাজিক জীব হিসেবে ব্যক্তি স্বভাবতই সামাজিক সমর্থন আশা করে থাকে। স্ট্রেসযুক্ত অবস্থায় সামাজিক সমর্থন ব্যক্তিকে নিজের উপর থেকে স্ট্রেসের প্রভাব কমাতে সাহায্য করে। আশেপাশের মানুষের এক্ষেত্রে সহায়তা, পরামর্শ বা নৈতিক সমর্থন প্রদান করতে পারে যা ব্যক্তিকে স্ট্রেসফুল সিচুয়েশন থেকে মুক্তি পেতে সহায়তা করে।
o ব্যক্তি অনেকসময় নিজেই স্ট্রেসযুক্ত অবস্থার সমাধানে এগিয়ে আসে এবং নিজেই তা সমাধানের দায়িত্ব গ্রহণ করে।
o অনেকেই রয়েছেন যারা স্ট্রেসযুক্ত অবস্থা থেকে অনেকটা পালিয়ে বাঁচতে চান। তাদের মধ্যে অনেকের মনে এই ধারণা জন্মায় যে স্ট্রেস উৎপন্ন করে এমন কাজকর্ম কিংবা চিন্তা-ভাবনা থেকে দূরে থাকলে স্ট্রেস কম অনুভূত হবে। বর্তমানে তরুণ সমাজের মধ্যে “আরে ভাবিস না এটা নিয়ে, প্যারা নাই! chill!” অনেকটাই অ্যাভয়ডার ( avoider) কোপিং স্ট্র্যাটেজির দিকে ইঙ্গিত দিয়ে থাকে।
o স্ট্রেসফুল সিচুয়েশনে ঘাবড়ে না যেয়ে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ এবং সমস্যা সমাধানের কৌশল সম্পর্কে ভাবা এবং সে অনুসারে কাজ করার মাধ্যমে মানুষের সৃজনশীলতা এবং ধৈর্যশক্তি প্রকাশ পায়।
এছাড়া বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মনোবিজ্ঞানী এবং চিকিৎসকেরা ভিন্ন ভিন্ন কিছু কৌশলের কথা উল্লেখ করেছেন যা কিনা ব্যক্তিকে স্ট্রেস থেকে দূরে রাখা কিংবা স্ট্রেসফুল সিচুয়েশনে মানিয়ে চলার ক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। সেগুলো হলো-
হালকা ব্যায়াম: প্রতিদিন হালকা ব্যায়াম যেমন হাঁটাচলা, জগিং, ইয়োগা, সাঁতার কাটা, সাইকেল চালানো, টেনিসের মতো ভাল শারীরিক অনুশীলন কার্যকরী।
রিলাক্সেশন: কেউ কেউ খুব সহজ এবং হালকা মেডিটেশনের সাহায্য নেন যেমন শান্ত পরিবেশে বই পড়া কিংবা হালকা সুরে সঙ্গীত শোনা। কেউ কেউ প্রফেশনাল গাইডের সাহায্য নিয়ে থাকেন যাদের দিক নির্দেশনার মাধ্যমে তারা মেডিটেশন করে থাকেন। শারীরিক ও মানসিকভাবে স্ট্রেস কাটানোর জন্য মেডিটেশন খুবই কার্যকর বলে বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত।
আত্ম-নিয়ন্ত্রণ: পূর্বের ঘটনা এবং তার ফলাফল থেকে শিক্ষা নিয়ে ব্যক্তি তার আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। স্ট্রেস কমাতে তাদের নিজস্ব আচরণ যথাযথভাবে পরিবর্তনের পাশাপাশি, লোকেরা তাদের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে আরও সচেতন হতে পারে যাতে কিনা তারা স্ট্রেসফুল সিচুয়েশনে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রেখে সমস্যা সমাধান করতে পারে।। ব্যক্তি কখনো কখনো কিছু বিশেষ মানুষ বা বিশেষ পরিস্থিতি এড়িয়ে চলতে পারে যা কিনা ব্যক্তিকে স্ট্রেসফুল সিচুয়েশনে ফেলে দেয়।
শেয়ারিং: স্ট্রেস উৎপন্ন করছে এমন বিষয়গুলোকে নিয়ে ব্যক্তি কথা বলতে পারেন। এক্ষেত্রে ব্যক্তির পরিবার, বন্ধুবান্ধব্দের এগিয়ে আসাটা ভালো কাজে দেয়। ব্যক্তি যখন তার স্ট্রেসের বিষয়টি অন্য কারো সাথে শেয়ার করে তখন তার উপর থেকে চাপ অনেকখানি কমে যায়। এছাড়া অনেকে প্রফেশনাল সাহায্যও নিয়ে থাকেন।
টাইম ম্যানেজমেন্ট: আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা সময়ের কাজ সময়ে না করে সেটিকে ফেলে রাখেন। এভাবে একের পর এক কাজ জমতে থাকে। হয়ত একসময় দেখা যায় শেষ সময়ে এসে আমরা নিজেদেরকে কাজের স্তুপের মাঝে খুঁজে পাই। বিশাল এই কাজের চাপে আমরা বেশ স্ট্রেসড আউট হয়ে যাই এবং এতে কাজগুলোও সঠিকভাবে সম্পন্ন হয় না। উদাহরণস্বরূপ ধরা যায় একজন ছাত্র যে কিনা পরীক্ষার আগের রাতে সারা বছরের পড়া একসাথে পড়বার চেষ্টা করে। এসব ক্ষেত্রে সঠিক টাইম ম্যানেজমেন্ট আমাদের স্ট্রেসের হাত থেকে মুক্তি দিতে পারে। বিজ্ঞানীদের মতে স্ট্রেস বাকেট থিওরি টাইম ম্যানেজমেন্ট এবং স্ট্রেসের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ককে সবচেয়ে ভালোভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারে। স্ট্রেস বাকেট থিওরিতে ব্যক্তিকে একটি বালতির সাথে তুলনা করা হয় এবং ট্যাপ থেকে পড়তে থাকে পানি দ্বারা কাজ বুঝানো হয়। আমরা যদি সময়ের কাজ সময়ে না করি তবে আস্তে আস্তে বালতিটি ভর্তি হতে থাকে এবং একসময় পানির উচ্চতা বাড়তে বাড়তে বালতি থেকে পানি উপচিয়ে পড়তে শুরু করে যাকে কিনা কাজের চাপে স্ট্রেসড আউট একজন মানুষের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। এবার যদি অন্য একটি বালতিতে একে একে কয়েকটি ছিদ্র করে দেয়া হয় তখন সেই বালতির ছিদ্রগুলো দিয়ে পানি বেরিয়ে যেতে পারে। এতে বালতিটিও আর পানি দ্বারা সম্পূর্ণ ভর্তি হয়ে যায়না এবং পানির উচ্চতাও বেশি বাড়তে পারেনা। এখানে প্রতিটি ছিদ্র করে দেয়া দ্বারা সময়মত কাজ করাকে বুঝানো হচ্ছে। অর্থাৎ যদি আমরা সময়ের কাজ সময়ে করি তবে আমাদের রূপক বালতিটিও পানি দ্বারা ভর্তি হয়না এবং আমরাও কাজের চাপে স্ট্রেসড আউট না হয়ে নিজেদের কাজগুলো সঠিকভাবে শেষ করতে পারি।
এগুলোর পাশাপাশি সাইকোথেরাপি ( কগনিটিভ থেরাপি, ইমোটিভ থেরাপি এবং স্ট্রেস-ইনোকুলেশন ট্রেনিং) দক্ষতা প্রশিক্ষণ, পরিবেশগত পরিবর্তন, শারীরিক পরিবর্তন (রক্তচাপ, মাথাব্যথার মতো শারীরিক লক্ষণ) নিয়ন্ত্রণ, ফ্যামিলি থেরাপি , গ্রুপ থেরাপি ইত্যাদিও স্ট্রেস মোকাবেলায় ব্যবহার করতে দেখা যায়।

প্রেসার কুকার

Share

“অনেক প্রেসারে আছি ভাই” লাইনটি আমরা প্রায়ই ব্যবহার করে থাকি। হোক সেটি কাজের প্রেসার কিংবা পরীক্ষার প্রেসার; আমরা মূলত আমাদের চারপাশের বিভিন্ন ঘটনাবলীর সম্মুখীন হয়ে স্ট্রেস বা চাপ অনুভব করে থাকি। স্ট্রেস শব্দটি আমাদের অতি পরিচিত। প্রতিটি মানুষই কোনো না কোনো সময় স্ট্রেসের সম্মুখীন হয়ে থাকেন। স্ট্রেস হচ্ছে মানবদেহের অভ্যন্তরীণ একটি অবস্থা যা কিনা শারীরিক চাহিদা কিংবা আশেপাশের পরিবেশ এবং সামাজিক পরিস্থিতির কারণে সৃষ্টি হয়ে থাকে। ব্যক্তি যদি স্ট্রেসের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন তবে সেটি ব্যক্তির শারীরিক এবং মানসিক উভয়ক্ষেত্রের জন্যই ক্ষতিকারক হিসেবে নিজেকে প্রকাশ করে।

আমাদের প্রতিদিনের কাজকর্ম কিংবা আশেপাশের পরিবেশের সাথে আমরা মানিয়ে চলার চেষ্টা করি। যখন আমরা কোনো একটি সিচুয়েশনের সাথে সম্পূর্ণভাবে নিজেদের মানিয়ে নিতে ব্যর্থ হই তখনই আমরা স্ট্রেস অনুভব করে থাকি। স্ট্রেস উৎপাদনকারী ঘটনাসমূহকে স্ট্রেসর হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়। মানুষের জীবনের প্রতিটি ছোট কিংবা বড় ঘটনাই স্ট্রেসর হিসেবে কাজ করতে পারে। যেমন কোনো দুর্ঘটনা কিংবা রোগব্যাধি,  প্রাকৃতিক দূর্যোগ, জীবনের বিশেষ কোনো পরিবর্তন, উচ্চমাত্রার শব্দ, স্কুল-কলেজ কিংবা অফিসের কাজকর্মের চাপ যেকোনো কিছুই আমাদের স্ট্রেস অনুভব করার জন্য দায়ী।

স্ট্রেসকে মূলত দুইভাগে ভাগ করা হয়; Eustress (ইউস্ট্রেস) বা পজেটিভ স্ট্রেস এবং Distress (ডিস্ট্রেস) বা নেগেটিভ স্ট্রেস।  এই পজেটিভ স্ট্রেস আমাদের জীবনে মোটিভেটর হিসেবে কাজ করতে পারে এবং নেগেটিভ স্ট্রেস হতাশাজনক পরিস্থিতির দিকে ইঙ্গিত করে। আমরা প্রতিনিয়ত স্ট্রেস জিনিসটিকে নেগেটিভ ভাবেই দেখে থাকি। আমাদের মধ্যে এই স্ট্রেস থাকাটাই কিন্তু স্বাভাবিক; কিন্ত খেয়াল রাখতে হবে সেই স্ট্রেসটা যেন পরিমিত পর্যায়ে থাকে। বেশি স্ট্রেসড হলে আমাদের নিত্যদিনের কাজ কর্মে ব্যাঘাত ঘটে। আবার অনেক সময় একদমই স্ট্রেস না থাকাটা আমাদের যেকোনো কাজে ডিমোটিভেট করতে যথেষ্ট। আমরা বলছিনা প্রোডাক্টিভিটি আনতে জোর করে স্ট্রেস আনতে হবে। অনেকেই আছেন যারা স্ট্রেসে থাকলে কাজ ভালো করেন। আবার অনেকে স্ট্রেসড না থাকলেই কাজে ভালো বোধ করেন। বিজ্ঞানীরা এই অপটিমাম স্ট্রেস লেভেল কে একটি গ্রাফের সাহায্যে বোঝানোর চেষ্টা করেন।

এখানে দেখানো হয় স্ট্রেস কিভাবে প্রোডাক্টিভিটি অর্থাৎ উৎপাদনের সাথে জড়িত। স্ট্রেস যত কম থাকে, মোটিভেশন তত কম থাকে, ফলে কাজ অথবা উৎপাদন ক্ষমতা কমে যায়। আবার স্ট্রেস বেশি হলে মোটিভেশন এর বদলে হতাশ মনোভাবের সৃষ্টি হয়ে সমস্ত কাজটিকেই বিগড়ে দেয়। বিজ্ঞানীরা গ্রাফটির মাধ্যমে দেখানোর চেষ্টা করেছেন এই পরিমিত স্ট্রেস অনেকসময় একধরণের ভালো মোটিভেটর হিসেবে কাজ করে এবং ব্যক্তিকে প্রোডাক্টিভিটির দিকে ধাবিত করায়। পরিমিত স্ট্রেস আমাদের মধ্যে ঠিক যতটুকু টেনশন সৃষ্টি করে ঠিক ততটুকুই কাজটি সম্পূর্ণ করার জন্য মোটিভেট করতে থাকে। তখন আমরা কাজটি শুরু করি। সুতরাং বলা যায়, আমাদের জীবনে স্ট্রেস সম্পূর্ণ নেগেটিভ কোনো ফ্যাক্টরও নয়।

স্ট্রেসের সাথে আমরা সবচেয়ে বেশি যে শব্দটি শুনে থাকি তা হচ্ছে কোপিং (coping) বা মানিয়ে চলা। স্ট্রেস কোপিং বলতে আমরা বুঝি সেই সব পদ্ধতি যার ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা স্ট্রেসফুল সিচুয়েশন গুলোকে মোকাবেলা করতে পারি। সাইকোলজিস্টরা দুইটি প্রধান কোপিং টেকনিকের কথা উল্লেখ করেছেন। সেগুলো হলো-

  • ইন্সট্রুমেন্টাল কোপিং- এখানে ব্যক্তি স্ট্রেসর বা স্ট্রেস উৎপন্নকারী সমস্যাটির উপর বেশি নজর দেয় এবং সেটি সমাধান করার উপায় খুঁজতে থাকে। এখানে স্ট্রেস কিছুটা পজেটিভ দিকে মোড় নেয় এবং ব্যক্তিকে অনেক সময় সাহায্য করে সৃজনশীল সমাধান খুঁজে বের করতে।
  • ইমোশনাল কোপিং- এখানে ব্যক্তি সমস্যাটির চাইতে সেই সমস্যা দ্বারা উদ্ভুত চিন্তা এবং অনুভূতির দ্বারা বেশি প্রভাবিত থাকেন। ব্যক্তি তখন সমস্যা সমাধানের বদলে উক্ত অনুভূতি গুলোকে নিয়ে কাজ করেন কিংবা সম্পূর্ণ ভাবে এড়িয়ে যান। অনেকে এটিকে নেগেটিভ স্ট্রেসের কাতারে ফেলে থাকেন।

চাপ কমাতে বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করা যেতে পারে। আমাদের স্ট্রেসের কারণ আমরা কারো সাথে শেয়ার করার মাধ্যমে চাপমুক্ত থাকতে পারি। টাইম ম্যানেজমেন্ট করেও চাপমুক্ত থাকা যায় কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় সময়মত কাজ না শুরু করার ফলে আমরা চাপে পড়ে যাই। সময়ের কাজ সময়ে করলে স্ট্রেস থেকে অনেকখানি মুক্ত থাকা যায়। এছাড়া থেরাপিস্টরা সাধারণত রিল্যাক্সেশন এর উপর বেশি জোর দিয়ে থাকেন। ব্রিদিং এক্সারসাইজ, মেডিটেশন, মাইন্ডফুলনেস এর চর্চা করা ও স্ট্রেস থেকে বাঁচতে ভালো কাজে দেয়। এছাড়া সাইকোলজিস্টরা আরো অনেক স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট স্কিলের সাহায্যে ক্লায়েন্টদের সহায়তা করে থাকেন। -আশিক মাহমুদ

প্যারেন্টিং স্টাইল ও সন্তানের ভবিষ্যৎ

Share

‘অমুকের ছেলে পরীক্ষায় ফার্স্ট হতে পারলে তুমি কেন পারবে না?’- আমাদের দেশে এইরকম কথা শুনেনি এইরকম ছেলেমেয়ে পাওয়া ভার। অনেক ছেলেমেয়ে ছোটবেলা থেকেই এই কারণে হীনমন্যতায় ভোগে। বাবা মা আমাদের সবচেয়ে বড় শুভাকাঙ্ক্ষী- এই বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু সন্তানের ভালো হবে চিন্তা করে বাবা মায়েরা যা কিছু করেন তার সবই কি ঠিক?

শুধু খাদ্য, পোশাক, ভালো স্কুলে ভর্তি করানো ইত্যাদি মৌলিক চাহিদা পূরণ করা পর্যন্তই অভিভাবকের দায়িত্ব সীমাবদ্ধ না।সন্তানের মনস্তত্ব সঠিকভাবে বুঝা ও তার মানসিক বিকাশের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করাও অভিভাবকের গুরুদায়িত্ব। এই প্যারেন্টিং স্টাইলের উপর সন্তানের ভবিষ্যৎ আচরণ অনেকখানি নির্ভর করে।

যেসব পিতামাতা তাদের সন্তানদের যথেষ্ঠ সময় দেন না তাদের সন্তানদের আচরণে পরবর্তীতে aggressiveness আর insecurity লক্ষণীয়। আবার সন্তানের প্রতি অতিরিক্ত সংবেদনশীল (over protective) বাবা মায়েদের কারণে সন্তানরা অতিরিক্ত নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। অনেক পিতামাতাই সন্তানের ন্যায় অন্যায় সকল আবদার পূরণ করে থাকেন। সন্তানের আবদার পূরণ করাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু অনেক সময়ই দেখা যায় সন্তান আরেকজনের খেলনা তার অনুমতি ছাড়াই ব্যবহারের অন্যায় জেদ করে থাকে। আর পিতামাতা তাদের এই আবদার রক্ষাও করে থাকেন। এতে করে শিশুরা অন্যের খেলনা কেড়ে নিতে শিখে। পরবর্তীতে তারা আক্রমণাত্নক, অন্যের ইচ্ছা বা আবেগের প্রতি অসহিষ্ঞু এবং অবাধ্য হয়ে উঠে।

সমাজ মনোবিজ্ঞানীরা শিশুর সামাজিকীকরণে প্যারেন্টিং স্টাইলের প্রভাব নিয়ে প্রচুর গবেষণা করেছেন। মনোবিজ্ঞানীরা মূলত তিন ধরণের প্যারেন্টিং স্টাইল চিহ্নিত করেছেন।

১. Authoritarian

২. Permissive

৩. Authoritative

Authoritarian প্যারেন্টিং এ পিতামাতার প্রতি চরম আনুগত্য প্রদর্শন করা হয়। শিশুদের মতামত বা ইচ্ছাকে কম মূল্যায়ন করা হয়। শিশুর আচরণ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য শাস্তির প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়। এতে করে পিতামাতা ও শিশুদের সম্পর্ক আন্তরিক ও বন্ধুত্বপূর্ণ হওয়ার বদলে শিশুর মধ্যে ভীতি ও আনুগত্যের সৃষ্টি করে। Authoritarian প্যারেন্টিং শিশুর আত্নবিশ্বাস গঠনে বিরূপ ভূমিকা পালন করে। পরবর্তী জীবনে ব্যক্তির আচরণে রাগ, বিতৃষ্ঞা, ক্ষোভ, ডিপ্রেশন দেখা দিতে পারে।

Permissive পিতামাতা শিশুর উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করেন না বরং শিশুদের নিজেদের অভিব্যক্তি প্রকাশের সুযোগ সৃষ্টি করেন। শিশুদের শাস্তির ভয় দেখিয়ে নিয়ম শৃঙ্খলা বা আদব কায়দা শেখানোর পরিবর্তে এর পেছনের যৌক্তিক কারণগুলো বুঝিয়ে নিয়ম কানুন মেনে চলতে উৎসাহিত করেন। যেমন, কোন শিশু জোর করে অন্যের খেলনা নেওয়ার আবদার করলে পিতামাতা যদি ছোট বয়সেই তাদের বুঝিয়ে বলেন যে অন্যের জিনিস তার অনুমতি ব্যতীত ব্যবহার করা উচিত না- তাহলে তারা তাদের আচরণে পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবে। পরবর্তীতে তারা অন্যের ইচ্ছা অনিচ্ছার প্রতিও শ্রদ্ধাশীল হবে।

মনোবিজ্ঞানীরা authoritative প্যারেন্টিং স্টাইলকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। Authoritative পিতামাতা যেমন শিশুর নিজস্ব ব্যক্তিত্বকে গুরুত্ব দেন তেমনিভাবে তারা সামাজিক মূল্যবোধ শিখানোর প্রতিও যত্নশীল। Authoritative প্যারেন্টিং এ ব্যক্তির সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্বাধীনতা, মতামত, ব্যক্তিত্বকে গুরুত্ব সহকারে মূল্যায়ন করা হয়। শিশুদের আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলা, সামাজিকীকরণ, সফল ব্যক্তিত্ব গঠনে authoritative প্যারেন্টিং সবচেয়ে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।গবেষণায় দেখা গেছে, authoritative প্যারেন্টিং এ বেড়ে উঠা শিশুর পরবর্তী জীবনে ডিপ্রেশন বা অপরাধ প্রবণতার হার অনেক কম।

প্রতিটি শিশু প্রাথমিক গুরুত্বপূ্র্ণ আচরণ পরিবার তথা পিতামাতা থেকেই  শিখে। তাই একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গড়ে তোলার জন্য সঠিক প্যারেন্টিং এর প্রতি পিতামাতার যত্নবান হওয়া উচিত।  -সামিরা মাহজাবিন

ফ্রাস্ট্রেশনের এপিঠ ওপিঠ

Share

“খুব ফ্রাস্ট্রেশনে আছি” আমাদের প্রতিদিনের জীবনে একটি সাধারণ বিষয় হয়ে উঠেছে এই কথাটি। সাধারণত আমরা কখন ফ্রাস্ট্রেশনে থাকি? কেনোই বা ফ্রাস্ট্রেশন ঘিরে ধরে আমাদের? এই নিয়েই আজকের লেখা।

ফ্রাস্ট্রেশন কখন হয়?

সাধারণত আমরা যখন আমাদের কোনো একটি লক্ষ্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হই কিংবা কোনো একটি কাজ করার সময় বাধার মুখে পড়ি তখন আমরা ফ্রাস্টেশনের সম্মুখীন হই। প্রতিদিনের ঘটনাবহুল জীবনে বিভিন্ন বিষয়ের কারণেই আমরা ফ্রাস্টেশন অনুভব করতে পারি। দীর্ঘ জ্যাম, টিকেট কাউন্টারের লম্বা লাইন, বিকট শব্দে বাজতে থাকা লাউডস্পীকারের ফলে পড়াশোনায় মনোযোগ বসাতে না পারা ইত্যাদি ঘটনার কারণে আমরা প্রায় সময়ই ফ্রাস্ট্রেশন অনুভব করছি। ফ্রাস্ট্রেশনের সাথে প্রাথমিক ভাবে আমরা বিরক্তি এবং রাগ অনুভব করে থাকি। তবে সব ধরণের ফ্রাস্ট্রেশনই যে রাগের সৃষ্টি করবে তা নয়। অনেক ক্ষেত্রে আমরা ফ্রাস্ট্রেশনকে একধরণের সিগন্যাল হিসেবে নিতে পারি যা কিনা আমাদের লক্ষ্যের দিকে আমাদের এগিয়ে যাওয়ার পন্থাকে প্রভাবিত করে। অর্থাৎ কোনো এক উপায়ে কাজ সম্পন্ন না হলে অন্য কোনো উপায়ের আশ্রয় নেয়া। এতে ব্যক্তি তার সৃজনশীলতার চর্চা করতে পারে। ফ্রাস্ট্রেশন স্বয়ংক্রিয় ভাবেই আমাদের জীবনে আসবে এবং প্রভাব বিস্তার করবে। যেহেতু আমরা অর্জন এবং সাফল্যের দিকে নিজেদের জীবনকে পরিচালিত করছি সেহেতু প্রতিটি পদক্ষেপে বাধার সম্মুখীন হওয়া এবং তা থেকে ফ্রাস্ট্রেশনের সৃষ্টি হওয়াটা স্বাভাবিক।

ফ্রাস্ট্রশন কেনো হয়?

আমরা আগেই জেনেছি যে, সাধারণত মানুষ যখন কাজেকর্মে বাধা পায় কিংবা কোনো একটি লক্ষ্য অর্জনে বাধার সম্মুখীণ হয় তখন সে ফ্রাস্ট্রেশন অনুভব করে থাকে। সাইকোলজিস্টরা ফ্রাস্ট্রেশন কেনো হয় এর উত্তর খুঁজতে গিয়ে অভ্যন্তরীন এবং বহিরাগত দুই ধরণের কারণ চিহ্নিত করেছেন। ফ্রাস্ট্রেশনের কারণ হিসেবে কোনো একটি কাজ সম্পন্ন করার জন্য প্রয়োজনীয় আত্মবিশ্বাসের অভাব কে অভ্যন্তরীন কারণ এবং কোনো একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যের সামাজিক অবস্থা কিংবা উক্ত লক্ষ্যের প্রতি সমাজের বিরূপ প্রতিক্রিয়া এবং অন্যান্য বাধা বিপত্তিকে বহিরাগত কারণ হিসেবে দায়ী করে থাকেন। এছাড়া অধিক চিন্তা, ভয়, উদ্বেগ থেকেও ফ্রাস্ট্রেশনের সৃষ্টি হয়ে থাকে।

ফ্রাস্ট্রেশনের রকমফের

ফ্রাস্ট্রেশন মূলত দুই প্রকার। প্রাইমারী ফ্রাস্ট্রেশন এবং সেকেন্ডারি ফ্রাস্ট্রেশন। প্রাইমারী ফ্রাস্ট্রেশন বলতে মূলত বোঝায় যখন কেউ একজন তার কোনো একটি প্রাথমিক প্রয়োজন মেটাতে ব্যর্থ হয়। এক্ষেত্রে ব্যক্তির কাছে প্রয়োজনটির প্রাধান্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ এবং এখানে ব্যর্থতাকেই ব্যক্তি বড় করে দেখেন। যেমন কেউ হয়ত পরের দিন অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে ব্যর্থ হচ্ছে। ব্যক্তির কাছে এই ব্যর্থতাই তখন ফ্রাস্ট্রেশনের কারণ। সেকেন্ডারি ফ্রাস্টেশনে একটি দৃশ্যমান বাহ্যিক কারণের উপর জোর দেয়া হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় উক্ত ব্যক্তি যদি লাউডস্পীকারে উচ্চস্বরে গান বাজানোর কারণে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে ব্যর্থ হন তখন তিনি লাউডস্পীকারের উপস্থিতির কারণে ফ্রাস্ট্রেশন বোধ করেন।

ফ্রাস্ট্রেশনের ফলে সাধারণত মানুষ বিরক্ত বোধ করে থাকে এবং সেটিকে কাটিয়ে উঠতে সে আক্রমণাত্মক হয়ে উঠতে পারে। অনেক সময় দেখা যায় তাদের এই আক্রমণাত্মক ব্যবহারের ফলে তারা তাদের ফ্রাস্ট্রেশনের মূল কারণ চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হয় এবং সেটির সমাধান তখন অনেকটা অসম্ভব হয়ে পড়ে।

ফ্রাস্ট্রেশন থেকে মুক্তি

ফ্রাস্ট্রেশনের সমাধান হিসেবে সাইকোলজিস্টরা সাধারণত ফ্রাস্ট্রেশনের মূল কারণ কিংবা এর উৎপত্তি কে চিহ্নিত করে সে অনুযায়ী কাজ করতে বলে থাকেন। ফ্রাস্টেশনের সময় রাগান্বিত না হয়ে ফ্রাস্ট্রেশনকে একটি স্বাভাবিক বিষয় হিসেবে মেনে নিয়ে শান্ত থাকলে এবং মেডিটেশন বা অন্যান্য উপায়ে নিজেকে “শীঘ্রই ফ্রাস্ট্রেশন কেটে যাবে” এই বিশ্বাস নিয়ে পুনরায় কাজ শুরু করলে ব্যক্তি আবারও স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে পারেন। ফ্রাস্ট্রেশন মানেই থেমে যাওয়া নয়। বরং বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে ফ্রাস্ট্রেশন আমাদের জন্য শাপেবর হয়ে আসতে পারে। ফ্রাস্ট্রেশনের সময় নিজের সক্ষমতার উপর বিশ্বাস রেখে কাজ করলে এবং কাজের প্রতি দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে থাকলে কাজ সম্পন্ন করার বিভিন্ন উপায় সামনে আসতে পারে যা ব্যক্তির ব্যবস্থাপনামূলক দক্ষতা এবং সৃজনশীলতার দিকটিকে ফুটিয়ে তোলে।

আশিক মাহমুদ

মনঋতুর আদ্যোপান্ত

Share

গত লেখায় আমরা জেনেছিলাম ইউনিপোলার ডিপ্রেশন সম্পর্কে। এই ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত ব্যক্তি প্রায় সময়ই শুধুমাত্র ডিপ্রেসনে ভুগে থাকেন। কিন্তু যদি আক্রান্ত ব্যক্তিটি কখনো অত্যন্ত ডিপ্রেশন আবার কখনো অত্যন্ত আনন্দিত অবস্থায় থাকে তখন আমরা সেটাকে কি বলতে পারি? মনোবিজ্ঞানীরা ব্যক্তির এই মানসিক অবস্থার নাম দিয়েছিলেন “ম্যানিয়াক ডিপ্রেশন”; পরে এটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় “বাইপোলার ডিসঅর্ডার”।

বাইপোলার ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত কারা?

বাইপোলার ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত ব্যাক্তি উপর্যুপরি প্রচন্ড রকমের মুড সুইং এর শিকার হন। কখনো অত্যন্ত ডিপ্রেসড থাকেন; এতটাই ডিপ্রেসড থাকেন যে ব্যক্তি আত্মহননের সিদ্ধান্তও গ্রহণ করতে পারেন আবার কখনো একজন ম্যানিয়াকের মত আচরণ করেন (ম্যানিয়া হচ্ছে ডিপ্রেশনের ঠিক উল্টো একটি অবস্থার নাম। এই পর্যায়ে ব্যক্তি অত্যন্ত উৎফুল্ল বোধ করেন)। ব্যক্তি তার এই ডিপ্রেশন কিংবা ম্যানিয়া ফেজটিতে সপ্তাহ কিংবা কখনো মাসব্যাপী অবস্থান করেন। মূলত ব্যক্তি এই দুই ধরণের অবস্থার মধ্যে প্রতিনিয়ত বসবাস করতে শুরু করেন বলেই একে বাইপোলার নামে অভিহিত করা হয়েছে। মনোবিজ্ঞানী ওয়াইনরেবের ভাষায় বাইপোলার ডিসঅর্ডার মূলত আমাদের মস্তিষ্কের একটি সমস্যা যা কিনা আমাদের মানসিক অবস্থার ওঠানামা করার জন্য দায়ী। এই ওঠানামা এতটাই প্রকট হয় যে, এটি আমাদের দৈনন্দিন কাজকর্মে যথেষ্ঠ ব্যাঘাত ঘটাতে সক্ষম। মানসিক সমস্যার তীব্রতার উপর ভিত্তি করে বাইপোলার ডিসঅর্ডারকে দুইটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়। ১) বাইপোলার ১ ডিসঅর্ডারঃ এখানে ব্যক্তি কমপক্ষে একবার ম্যানিয়া এবং তার আগে ডিপ্রেশন ফেজের মুখোমুখি হন। ২) বাইপোলার ২ ডিসঅর্ডারঃ এখানে ব্যক্তি একাধিকবার ডিপ্রেশনের শিকার হন এবং কমপক্ষে একবার হাইপো ম্যানিয়া ফেজে অবস্থান করেন। হাইপো ম্যানিয়াক ব্যক্তির ঘুম কম হয় এবং অত্যন্ত চঞ্চল প্রকৃতির হয়ে থাকেন। এছাড়া উৎফুল্লতা এবং প্রতিযোগী মনোভাব পোষণ করেন। তিনি প্রায়ই মিশ্র রকমের অনুভূতি অনুভব করেন। দুই ধরণের ক্যাটাগরিতেই ব্যক্তি প্রচন্ড রকমের মুড সুইং এর মধ্য দিয়ে যান।

বাইপোলার ডিসঅর্ডারের লক্ষণগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়।
১) ম্যানিয়াক সিম্পটম-

  • অদ্ভুত বোধ করা।
  • উদাস কিংবা একঘেয়েমিতা।
  • বিভ্রান্ত বোধ করা।
  • উৎফুল্ল ব্যক্তির মনে হয় যে তারা যে কোনো কিছুই করতে পারেন এবং এই চিন্তা থেকে তারা বিপদজনক কাজ করে বসতে পারেন।
  • ব্যক্তির আচরণে হঠাৎ করে চিন্তার উদয় হওয়া আবার হঠাৎ ই সেটি মিলিয়ে যেয়ে নতুন কোনো চিন্তার উদয় হওয়া।
  • চঞ্চলতা কিংবা কখনো আক্রমনাত্মক ব্যবহার দেখা দেয়।

২) ডিপ্রেশন সিম্পটম

  • হতাশা
  • নিজেকে দোষী এবং ব্যর্থ মনে করা
  • উদ্বিগ্নতা
  • ঘুমের ব্যাঘাত
  • দুঃখী মনোভাব
  • বিরক্তিবোধ, ইত্যাদি।

ম্যানিয়াক ব্যাক্তি কখনো নিজেকে অত্যন্ত সফল এবং সুখী ভাবেন আবার হঠাৎই ডিপ্রেশন ফেজে হতাশায় নিমজ্জিত হন। কমপক্ষে সাত দিন থেকে বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে দুইধরণের লক্ষণই বারবার দেখা গেলে ব্যাক্তি বাইপোলার ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত বলে ধরে নেয়া যায়।

কি কারণে বাইপোলার ডিসঅর্ডার হতে পারে?

বাইপোলার ডিসঅর্ডারের কারণ হিসেবে মূলত বিজ্ঞানীরা আমাদের মস্তিষ্কের অস্বাভাবিক কার্যক্রমকে চিহ্নিত করেছেন। নোরেনেফ্রিন হরমোনের অধিক ক্ষরণের ফলে ম্যানিয়া এবং স্বল্প সেরোটোনিন ক্ষরণের ফলে ডিপ্রেশন ফেজের উৎপত্তি হয়। কিছু গবেষক নিউরন মেমব্রেনের ভেতরে এবং বাইরে আয়নের অস্বাভাবিক চলাচল এবং জেনেটিক এ্যাবনর্মালিটিকে বাইপোলার ডিসঅর্ডারের জন্য দায়ী করছেন।

তবে সুখের বিষয় হচ্ছে বাইপোলার ডিসঅর্ডার দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা হলেও এটি সমাধানযোগ্য। বাইপোলার ডিসঅর্ডার ট্রিটমেন্টের প্রধান লক্ষ্য থাকে ম্যানিয়াক এবং ডিপ্রেশন ফেজের পুনরাবৃত্তির হার কমানো। সাইকিয়াট্রিস্ট রোগীর অবস্থা অনুযায়ী তাকে এ্যান্টিসাইকোটিস মেডিসিন কিংবা কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপী কিংবা ইলেক্ট্রো কনভালসিভ থেরাপীর আওতায় আনেন। সঠিক সেবার মাধ্যমে ৩ থেকে ৪ মাসের মধ্যে রোগীর অবস্থার উন্নতি দেখা যায়।

বাইপোলার ডিসঅর্ডার সহ অন্যান্য মানসিক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা সাধারণত তাদের অসুস্থতা প্রকাশের আশঙ্কায় থাকেন কারণ তারা মনে করেন যে তারা সমাজের দ্বারা প্রত্যাখাত হতে পারেন কিংবা পাগল বলে অভিহিত হতে পারেন। এই ভয়টি আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিত্সা গ্রহণ থেকে বিরত করতে পারে যা তাদের পরিস্থিতি আরও খারাপ করে দেয়। লিন্ডন (২০১১) এর মতে, দুই ধরণের ভয় কাজ করে; সাধারণ মানুষের বাইপোলার ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত রোগীর প্রতি ভয় এবং রোগীর নিজের ভয়। রোগীর নিজের ভয় থাকে মূলত নিজেকে নিয়ে উৎপন্ন হতাশা এবং স্বল্প আত্মমর্যাদা।  যে ব্যক্তি উভয় ধরণের ভয়ে  ভুগছেন তিনি নিঃসন্দেহে মানসিক সাহায্য এবং প্রিয়জনের সমর্থন না পেলে এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে পারবেন না। বাইপোলার ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রতি আমাদের আরো বেশি সহানুভূতিশীল হতে হবে।

-আশিক মাহমুদ

বিষন্নতা বৃত্তান্ত

Share

খুব হাসিখুশি প্রাণবন্ত রাজীবের জীবন যেন হঠাৎ করেই থমকে গেছে। এক অদ্ভুত শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে তার মনে। সকালে ঘুম থেকে উঠলেও  রাজীব ঘন্টার পর ঘন্টা বিছানায় পড়ে থাকে। নানা অজুহাত‌ দেখিয়ে সে কয়েকদিন অফিসে যায়নি। তার খুব জরুরি প্রেজেন্টেশন ছিল আজকে অথচ তার মনেই নেই। অফিসের ম্যানেজারের ফোন পেয়ে রাজীবের মধ্যে খুবই হীনমন্যতাবোধ কাজ করছে। ফোনটা রেখে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রাজীব ভাবতে থাকে সে‌ হয়ত কোন কিছুরই যোগ্য না। রাজীবের সবচেয়ে কাছের বন্ধু অভি গত কয়েকদিন তাকে ফোন করছে কিন্তু রাজীব বারবার কেটে দিয়েছে। তার মনে অনেক কিছু বলার আছে অথচ কারও সাথে কথা বলতেও প্রচন্ড দ্বিধা হচ্ছে।  প্রতিদিন এভাবেই তার দিন চলে যাচ্ছে তীব্র মানসিক যন্ত্রণায়। অথচ কয়েক মাস আগেও রাজীবের অবস্থা এমন ছিল না‌।  একরকম জোর করেই অভি রাজীবকে সাইকোলজিস্ট এর কাছে নিয়ে যায়। রাজীবের গত কয়েক মাসের ঘটনার বিবরণ থেকে জানা গেল সে বিষন্নতায় ভুগছে।

বিষন্নতা কী?

বিষন্নতা বা ডিপ্রেশন ব্যাপারটি বেশ জটিল এবং এর প্রেক্ষাপট বিশাল। এটি একটি সাইকোলজিক্যাল ডিজঅর্ডার। ডিপ্রেশনকে মূলত দুই ভাগে ভাগ করা যায়- unipolar depression এবং bipolar disorder। সাধারণত ডিপ্রেশন বলতে আমরা Unipolar Depression কেই বুঝি। DSM-5 অনুযায়ী,‌ দুই সপ্তাহের অধিক সময় ধরে ব্যক্তির মধ্যে ক্রমাগত ডিপ্রশনের বিভিন্ন লক্ষণ দেখা দিলে ব্যক্তি ডিপ্রেশনে ভুগছে ধরা হয়। সময় ব্যবধান(duration) এবং লক্ষনের উপর ভিত্তি করে এর মাত্রা ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে।

ডিপ্রেশনের লক্ষণসমূহ

ডিপ্রেশনের লক্ষণগুলোকে পাঁচটি ক্ষেত্রে ভাগ করা যায়। প্রতিটি ক্ষেত্রেরই আলাদা আলাদা সাইকোলজিক্যাল টার্ম রয়েছে। বোঝার সুবিধার্থে এখানে প্রত্যেক ক্ষেত্রের কিছু উদাহরণ দেয়া হল।

১| ব্যক্তির মধ্যে নেতিবাচক আবেগ যেমন: কষ্ট, রাগ, উদ্বেগ

বেড়ে যায়। কোন কোন সময় ব্যক্তি হয়ত কোন কাজেই আর আনন্দ বা আগ্রহ খুঁজে পায়না।

২| ব্যক্তির মধ্যে কাজ করার অনুপ্রেরণা বা উদ্যোগ, স্বতঃস্ফূর্ত মনোভাব থাকেনা। এমনকি বন্ধু বান্ধবের সাথে কথা বলা বা ঘুরাফিরা করাও নানা অজুহাতে এড়িয়ে যায়।

৩| ব্যক্তির আচরণে স্পষ্ট পরিবর্তন আসে। তারা আগের মত কাজে মনোযোগ দিতে পারেনা। হঠাৎ করেই হয়ত আড্ডায় প্রাণবন্ত মানুষটি একা থাকা শুরু করে।

৪| ডিপ্রেশনে ভোগা মানুষ প্রায়ই হীনমন্যতায় ভোগে। অপরের তুলনায় নিজেকে ছোট মনে করে‌ আর নিজেকে নিয়ে হতাশায় ভোগে।

৫| ডিপ্রশনের কারণে মাথাব্যথা, মাথা ঘোরানো, খাওয়ায় অরুচি ইত্যাদি বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।

ডিপ্রেশন কেন হয়?

ডিপ্রেশন বিভিন্ন কারণে হতে পারে। ডিপ্রেশন হতে পারে সরাসরি জীবনের কোন ঘটনার কারণে এমনকি মানবদেহের হরমোনের কারণেও হতে পারে। সেরেটোনিন এবং নরএপিনেফ্রিন হরমোন নিঃসরণ কমে গেলে ব্যক্তির মধ্যে ডিপ্রেশন দেখা দিতে পারে। ছোটবেলার কোন দুঃসহ স্মৃতি মানুষের মনে জায়গা করে ফেললেও মানুষ ডিপ্রেশনে ভুগতে পারে। তাছাড়া আরও অনেক কারণে ব্যক্তি বিষন্ন হয়ে পড়ে যেমন: নেতিবাচক চিন্তা ধারনা, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে, সামাজিক চাপে  ইত্যাদি।

ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায়

ভিন্ন ভিন্ন মানুষের মধ্যে ডিপ্রেশনের কারণ যেমন ভিন্ন হয় তেমনি ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায়ও ব্যক্তি বিশেষে ভিন্ন ভিন্ন হয়। দক্ষ কাউন্সিলর এর সাথে নিজের সমস্যা আলোচনা করে এর সমাধান পাওয়া যেতে পারে। তাছাড়া নিজের নেতিবাচক চিন্তাগুলো ভালভাবে চিহ্নিত করে চিন্তায় ইতিবাচকতা আনতে হবে। ধীরে ধীরে বাইরের মানুষ আর পরিবেশে খাপ খাইয়ে নেয়ার চেষ্টা করতে হবে। বন্ধু নির্বাচনে সতর্ক হতে হবে। অনেক সময় বন্ধুদের সাথে শেয়ার করলেই সমাধান বেরিয়ে আসতে পারে আবার অনেক ‌সময় বন্ধুরাই বাঁকা কথার দ্বারা ব্যক্তির মধ্যে হীনমন্যতাবোধ সৃষ্টি করে। নিজের সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা আর আত্মবিশ্বাস গড়ে তুলতে হবে।

(সামিরা মাহজাবিন)

HSC Exam :The বেসামাল চাপ!

Share

(১)

‘উফ্!!এবার আর এ+ পাব না। ‘

রাব্বির তাই মনে হচ্ছে। এপ্রিল থেকে তার পরীক্ষা শুরু হবে। ভালো কলেজের মেধাবী ছাত্র সে, প্রস্তুতিও খুব ভালো। সারাবছর রাতদিন এক করে পড়ালেখা করেছে। মা-বাবার প্রত্যাশা অনেক বেশি, একমাত্র ছেলে রাব্বি। সবার কথা মাথায় রেখে সে পরিশ্রম করেছে। অথচ পরীক্ষার সাত দিন আগে থেকে কিছুই পড়তে পারছে না। ভয় আর টেনশনের ফলে রাব্বি খুব হতাশ হয়ে পড়েছে। বই নিয়ে বসলেই মনে হয়,

– যদি Golden A + না আসে তবে কি হবে?

-যদি  MCQ কঠিন হয়?

 -ICT সহজ হবে তো? আর কত কী!

রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারছে না। ঘুমাতে গেলে দুঃস্বপ্ন দেখে। তাই সারারাত জেগে কাটাচ্ছে। ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করতে পারছে না। মেজাজ খিটখিটে হয়ে গেছে। মা-বাবা তাকে নিয়ে খুব চিন্তিত। বন্ধুরা বিরক্ত। সবারই তো পরীক্ষা। ‘রাব্বি কেন বেশি ভাব ধরছে?’-বন্ধুরা মিলে তাই ভাবছে। পরীক্ষা আসলে প্রতি বার এমন হয় তার।কিন্তু এবার বেশি টেনশনে আছে রাব্বি। সামনে যে ভর্তি পরীক্ষা!

খুব ভালো  করতে হবে। সবাই রাব্বিকে মানসিক ভাবে চাপ মুক্ত থাকার সুফল বোঝাচ্ছে। তবুও বেচারার টেনশন কমছে না।

(২)

ইমা পরীক্ষা নিয়ে চিন্তিত। টিউশনি করানো, বাসার কাজ সবই আগের মতোই করছে। পরীক্ষা আসলে প্রতি বার সে সব কাজ সময় মতো করার চেষ্টা করে। ইমা মনোযোগী ছাত্রী,  পড়ালেখা করে নিয়মিত। ফলে সবসময় খুবconfident থাকে। সব পরীক্ষা ভালো করবে, সে বিশ্বাস করে। সান্ধ্য আড্ডায় কম যাবে। আর টিভি দেখবে খুব কম পরীক্ষার সময়টায়। ফেসবুক চালানো বাদ দিবে। পড়ালেখা আর কাজে  ভারসাম্য আনবে। ইমা আরও বেশি নিয়মিত হবে পড়াশোনায়। পরীক্ষার চাপ তাকে  মনোযোগী করে তুলেছে।

আমরা প্রতিনিয়ত স্ট্রেস জিনিসটিকে নেগেটিভ ভাবেই দেখে থাকি। তবে আমাদের মধ্যে এই স্ট্রেস থাকাটাই স্বাভাবিক; কিন্ত খেয়াল রাখতে হবে সেই স্ট্রেসটা যেন পরিমিত পর্যায়ে থাকে। বেশি স্ট্রেসড হলে আমাদের নিত্যদিনের কাজ কর্মে ব্যাঘাত ঘটে। আবার অনেক সময় একদমই স্ট্রেস না থাকাটা আমাদের যেকোনো কাজে ডিমোটিভেট করতে যথেষ্ট। আমরা বলছি না প্রোডাক্টিভিটি বাড়াতে জোর করে স্ট্রেস আনতে হবে। অনেকেই আছেন যারা স্ট্রেসে থাকলে কাজ ভালো করেন। আবার অনেকে স্ট্রেসড না থাকলেই কাজে ভালো বোধ করেন। বিজ্ঞানীরা এই অপটিমাম স্ট্রেস লেভেল কে একটি গ্রাফের সাহায্যে বোঝানোর চেষ্টা করেন। এখানে দেখানো হয় স্ট্রেস কিভাবে প্রোডাক্টিভিটি অর্থাৎ উৎপাদনের সাথে জড়িত। স্ট্রেস যত কম থাকে, “আরে ধুর, সমস্যা নাই, হয়ে যাবে, এত টেনশনের কিছু নাই” ইত্যাদি মনোভাব তৈরী হয়, অর্থাৎ মোটিভেশন কম থাকে, ফলে কাজ অথবা উৎপাদন ক্ষমতা কমে যায়। আবার স্ট্রেস বেশি হলে “হায় হায় কী হবে” মনোভাব তৈরী হয়ে সমস্ত কাজটিকেই বিগড়ে দেয়। বিজ্ঞানীরা গ্রাফটির মাধ্যমে দেখানোর চেষ্টা করেছেন এই পরিমিত স্ট্রেস অনেক সময় একধরণের ভালো মোটিভেটর হিসেবে কাজ করে এবং ব্যক্তিকে প্রোডাক্টিভিটির দিকে ধাবিত করায়। পরিমিত স্ট্রেস আমাদের মধ্যে ঠিক যতটুকু টেনশন সৃষ্টি করে ঠিক ততটুকুই কাজটি সম্পূর্ণ করার জন্য মোটিভেট করতে থাকে। তখন আমরা কাজটি শুরু করি। সুতরাং বলা যায়, আমাদের জীবনে স্ট্রেস সম্পূর্ণ নেগেটিভ কোনো ফ্যাক্টরও নয়।

(৩)

পরীক্ষা তো কি? প্যারা নাই মামা!!

তুহিন পরীক্ষা নিয়ে মোটেও চিন্তিত  নয়। পরীক্ষা যতই কাছে আসছে সে ততই অনলাইনে থাকে। তুহিনের চিন্তায় বাসার সবাই অস্থির। মা বলেন – পড়াশোনা না করলে ছেলেটা ফেল করবে,আমি মানুষকে মুখ দেখাব কি করে!?  তাতে কি! সবার টেনশন তুহিন কে পড়ায় বসাতে পারে না। সে নিয়মিত ছবি আপলোডে ব্যস্ত। কতটা like আর react  হলো ছবিতে সে তা নিয়ে ব্যস্ত।পড়তে বসলে মনে হয় দুবছর তো আর কম পড়িনি। ভালো রেজাল্ট করতে একদিন পড়লেই হবে। So no tension, do furti।

ICT, Finance এ টেনেটুনে পাশ করেও ফাইনালে ভালো করার স্বপ্ন দেখে তুহিন। মা বাবা, বন্ধুরা যতই মোটিভেট করুক না, তাতে কোনো লাভ হয়নি।

পরীক্ষার আগে পড়লেই ভালো করা যাবে, তাই তুহিন মানসিক ভাবে কোনো চাপ অনুভব করছে না।

###উপরের গল্প গুলো থেকে বলা যায়, রাব্বি পরীক্ষা নিয়ে অনেক বেশি  চিন্তিত। সে High Stress level এ আছে। এ অবস্থায় সে পড়াশোনায় মনোযোগী হতে পারছে না। বেশি ভালো করার চিন্তায়, স্বাভাবিক পড়ালেখাই চালিয়ে যেতে পারছে না।পরীক্ষার সময় অনেকের  এমন হয়। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে পরীক্ষায়। যারা সব কিছুতে Stress নেয় বেশি, তাদের পক্ষে ভালো করে পড়ালেখা বা কাজ করা সম্ভব হয় না।

অপরদিকে, ইমা optimum stress level  এ আছে। এজন্য ইমার পক্ষে পড়াশোনা বা অন্যান্য কাজ চালিয়ে যেতে কোনো সমস্যা হয় না। মানসিক চাপ ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।  পরিমিত মানসিক চাপ  মনোযোগ বাড়ায়। ফলে মানসিক চাপ যে কাজ করার ইচ্ছে আর ক্ষমতা বাড়ায় তা প্রমাণিত হয়ে যায়।

যদি কোনো চাপ না থাকে কাজ করার সময় তবে কোনো কাজই  ভালো করে করা সম্ভব হয় না। তুহিনের বর্তমান চাপ মুক্ত চিন্তা তাকে পড়ায় মনোযোগী করতে পারছে না। মোট কথা তুহিন যদি মানসিক ভাবে পরীক্ষার জন্য চাপ অনুভব করে, তাতে পড়াশোনায় মন বসবে। তুহিন Low Stress level এ আছে, তার পক্ষে ভালো করা সম্ভব হবে না

তাই সবশেষে বলা যায়, রাব্বি কে মানসিক চাপ কমাতে হবে ভালো করার জন্য।

ইমা যেটুকু চাপ বা টেনশনে আছে তা থাকাটাই ভালো।

আর তুহিনের জন্য চাপ নেয়ার মানসিকতা তৈরি করতে হবে।

চাপ কমাতে বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করা যেতে পারে। প্রথমে যেসব বিষয়ে আমরা স্ট্রেস অনুভব করি দেখতে হবে সেগুলি কোনোভাবে এড়িয়ে যাওয়া যায় কিনা। এর মধ্যে না বলতে শেখা অন্যতম। যেগুলি আমাদের চাপের মুখে ফেলে দিচ্ছে সেগুলিকে না করার মাধ্যমে আমরা খুব সহজেই চাপমুক্ত থাকতে পারি। এমনকি যেই মানুষ আমাদের স্ট্রেসে ফেলে দেয় তাদেরও আমরা এড়িয়ে চলতে পারি যেমন পাশের বাসার আন্টি। চাইলেই আমরা আমাদের অবস্থানকে পরিবর্তন করে স্ট্রেস কমাতে পারি। আমাদের স্ট্রেসের কারণ আমরা কারো সাথে শেয়ার করার মাধ্যমে বা যারা আমাদের স্ট্রেসের পরিমান বাড়িয়ে দিচ্ছে তাদের জানানোর মাধ্যমে চাপমুক্ত থাকতে পারি। টাইম ম্যানেজমেন্ট করেও চাপমুক্ত থাকা যায় কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় সময়মত কাজ না শুরু করার ফলে আমরা চাপে পড়ে যাই। যদি কোনভাবেই স্ট্রেস এড়ানো না যায় তাহলে স্ট্রেসের সাথে মানিয়ে নিতে পারি। স্ট্রেসের কারণ বা স্ট্রেসর কে নিজের সাথে ইতিবাচকভাবে মানিয়ে নিতে হবে। যেমন পরীক্ষার টেনসনে পড়া হচ্ছে না কিন্তু এটাও চিন্তা করা যায় যে এখন পড়তে না বসলে পরীক্ষা এমনিও খারাপ হবে তাই সময়মত পড়তে বসা যাতে পরীক্ষার ফল ভাল হয়। স্ট্রেস থেকে কিছুটা পরিত্রাণ পেতে গান শোনা, কোথাও ঘুরতে যাওয়া, বন্ধুর সাথে সময় কাটানো , আপনার যে কাজ করে আনন্দ পান সেগুলো করতে পারেন। অবশেষে যদি স্ট্রেস থেকে মুক্ত হবার কোন উপায় না পাওয়া যায় তাহলে কোন থেরাপিস্টের শরাপন্ন হতে পারেন।

সাধ্যের মধ্যে মন ভালো করার  পথ আছে। নিজেকে ভালোবাসুন, জীবন সুন্দর হয়ে যাবে রাতারাতি!!

লিখেছেন: তাহমিনা সুলতানা ইভা

কনভার্সন ডিসঅর্ডার

Share

ঘটনাঃ জনাব শহিদুল আলম একটি বেসরকারি ব্যাংকের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। তার পদমর্যাদার কারণেই তার উপর অনেক কাজের চাপ থাকে। গত কয়েক মাস যাবত প্রতিদিন তার বাম পায়ের হাঁটুর নিচ থেকে প্রচণ্ড ব্যাথা হত। দিনে দিনে ব্যাথার পরিমাণ এতোই বেড়ে গেলো যে তার জন্যে অফিসে বসে কাজ করাটাও কষ্টকর হয়ে পড়েছিলো। এ সমস্যা নিয়ে তিনি একজন অর্থোপেডিকের শরনাপন্ন হলেন,অথচ ডাক্তারের পরীক্ষায় এবং মেডিকেল টেস্টে কোন সমস্যাই ধরা পড়লো না। আবার এদিকে তার পায়ের ব্যাথার অবস্থা দিন দিন অবনতির দিকে যাচ্ছিলো।একদিন সকালে ঘুম ভেঙে প্রতিদিনের মত বিছানা থেকে উঠতে গিয়ে শহিদুল সাহেব টের পেলেন তিনি হাঁটুর নিচ থেকে তার বাম পা নাড়াতে পারছেন না। তৎক্ষণাৎ তিনি ডাক্তারের কাছে গেলেন এবারও ডাক্তারের পরীক্ষায় কিংবা টেস্টে সবকিছু স্বাভাবিক আসলো। অথচ শত টেস্ট,ঔষধ দিয়েও শহিদুল সাহেব তার বাম পায়ের হাঁটুর নিচের অংশে কোন অনুভূতিই ফিরে পাননি।

উপরের বর্ণনা করা করা ঘটনাটির পেছনে মুখ্য কারণ হতে পারে কনভার্সন ডিসঅর্ডার। কনভার্সন ডিসঅর্ডার হলো ব্যক্তির এমন একটি মানসিক অবস্থা যেখানে তার ঐচ্ছিক পেশী এবং শরীরের সংবেদনশীল অঙ্গসমূহতে এমন কিছু শারীরিক উপসর্গ দেখা যায় যা প্রচলিত চিকিৎসাব্যবস্থার কোন রোগের উপসর্গের সাথে মিলে না। অর্থাৎ,ব্যক্তি শারীরিক বিভিন্ন অসুবিধায় ভুগে থাকে অথচ শারীরিক উপসর্গগুলো প্রচলিত চিকিৎসা ব্যবস্থার কোন রোগের সাথে মিলে না । এটিকে ফাংশনাল নিউরোলজিক্যাল সিম্পটম ডিসঅর্ডারও বলা হয়ে থাকে। এ ডিসঅর্ডারটিকে ‘কনভার্সন’ ডিসঅর্ডার বলা হয় কারণ অনেক বিশেষজ্ঞের মতে এ ক্ষেত্রে ব্যক্তি তার মানসিক চাহিদা বা দ্বন্দ্বকে স্নায়বিক লক্ষণসমূহতে রূপান্তর করে থাকে। কনভার্সন ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত ব্যক্তিরা সাধারণত আংশিক পক্ষাঘাত, অন্ধত্ব, বধিরতা- এ সকল সমস্যার বিষয়ে উল্লেখ করে থাকে। প্রকৃত শারীরিক সমস্যা থেকে এ ডিসঅর্ডারটিকে আলাদাভাবে নির্ণয় করা পারা চিকিৎসকদের জন্যেও অত্যন্ত কঠিন বিষয়। অনেক ক্ষেত্রেই আসল শারীরিক ব্যাধিই এবং কনভার্সন ডিসঅর্ডার আলাদাভাবে নির্ণয় করার ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। যেহেতু আসল শারীরিক ব্যাধি এবং কনভার্সন ডিসঅর্ডারের উপসর্গের মাঝে অনেক মিল পাওয়া যায়, তাই চিকিৎসকেরা সাধারণ আসল ব্যাধির উপসর্গ এবং রোগীর বর্ণনা করা উপসর্গের মাঝে পার্থক্য খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন । এ ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত ব্যক্তির স্বাভাবিক জীবনযাত্রা তার শারীরিক উপসর্গগুলোর কারণে বাধাগ্রস্ত হতে পারে। সাধারণত শৈশবের শেষের দিক থেকে তারুন্যের শুরুর দিকে এ ব্যাধিতে আক্রান্ত হতে বেশি দেখা যায়।এ ডিসঅর্ডারে আক্রান্তের মাঝে পুরুষদের চেয়ে মহিলারা ২ থেকে ৩ গুণ বেশি ভুক্তভোগী হয়ে থাকে।

 

 

কনভার্সন ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত হবার কারণসমূহ

কনভার্সন ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত হবার মূল কারণ এখনও নিশ্চিতভাবে নির্ণয় করা সম্ভব হয়ে ওঠে নি। সাধারণত মাত্রাতিরিক্ত স্ট্রেস, দুঃশ্চিন্তা, উদ্বিগ্নতা, মানসিক দ্বন্দ্ব, ইমোশনাল ট্রমা কিংবা বিষণ্ণতা- এ ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত হবার কারণ হিসেবে বিবেচনা করা যায়। এ ডিসঅর্ডারের কারণে ব্যক্তি প্রাথমিকভাবে দু;শ্চিন্তাজনক বা স্ট্রেস তৈরিকারী পরিস্থিতি থেকে সাময়িকভাবে পরিত্রাণ পায়।

দ্বিতীয়ত, এই উপসর্গগুলো ব্যক্তির মধ্যে বিদ্যমান থাকলে দীর্ঘ সময়ব্যাপী সে স্ট্রেস তৈরিকারী পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পায়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, মস্তিষ্কের স্ট্রাকচারাল, সেলুলার কিংবা মেটাবলিক কার্যক্রমের পরিবর্তন বা বাধাপ্রাপ্ত হবার কারণেও শারীরিক উপসর্গগুলো দেখা যেতে পারে। এ ডিসঅর্ডারের ক্ষেত্রে যে শারীরিক উপসর্গগুলো দেখা যায় তা মুলত আসন্ন কোন আশংকাজনক পরিস্থিতি বা স্ট্রেস থেকে সাময়িক পরিত্রাণ পাবার জন্যে শরীরের একটি স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়া । উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে যে, একজন পুলিশ অফিসার যে প্রতিনিয়ত দাগী এবং ফেরারী আসামীদের নিয়ে কাজ করে, যাকে তার কাজের প্রয়োজনে আসামীর উপর গুলি চালাতে হয়। অথচ দেখা গেলো যে গুলি চালানো কিংবা কাউকে হত্যা করার কাজটি তিনি পছন্দ করেন না। কিন্তু কাজের প্রয়োজনে তাকে হয়তো প্রায়ই এ কাজটি করতে হয়ে থাকে। দেখা যেতে পারে যে, যে পরিস্থিতি এড়ানোর জন্যে তার শরীরের স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়া হিসেবে তার হাত অবশ কিংবা প্যারালাইসিস হয়ে গেছে। তখন এটি কনভার্সন ডিসঅর্ডার হিসেবে বিবেচিত হবে।
অনেকে অনেক ক্ষেত্রে মনে করেন যে, আক্রান্ত ব্যক্তি হয়তো তার শারীরিক সমস্যার ব্যাপারে মিথ্যা বলছেন বা বানিয়ে বলছেন। তখন তাদেরকে জোরপূর্বক এ সকল প্রতিক্রিয়া প্রকাশে বাধা দেয়া হয় অথবা তাদের কথায় গুরুত্ব দেয়া হয় না। এ ক্ষেত্রে এটি কার্যকরী উপায় তো নয়ই বরং তা দূর্দশার সৃষ্টি করে থাকে। এর উপসর্গগুলো শারীরিক মুভমেন্ট এবং ইন্দ্রিয়গুলোকে প্রভাবিত করতে পারে।

কনভার্সন ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত হবার ঝুঁকিসমূহ

  • যে সকল ব্যক্তি এ ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত হবার ঝুঁকিতে থাকে, তারা হলেন-
    ডিসোসিয়েটিভ ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত ব্যক্তি (এ ক্ষেত্রে ব্যক্তি বাস্তব জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে, বাস্তবতা সম্পর্কে অবগত থাকে না)
  • পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত ব্যক্তি ( যে ব্যক্তি কিছু সামাজিক পরিস্থিতিতে প্রত্যাশিত আচরণ এবং অনুভূতি প্রকাশে অক্ষম)
  • আগে থেকে মৃগীরোগ, কিংবা মুভমেন্ট জনিত সমস্যা থাকা
  • সাম্প্রতিক সময়ে কোন গুরুতর শারীরিক আঘাত বা মানসিক আঘাত পাওয়া
  • সম্ভবত, শারীরিক বা যৌন নির্যাতনের ইতিহাস বা শৈশবে অবহেলার শিকার হওয়া
  • পরিবারে অন্য কেউ কনভার্সন ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত থাকলে

কনভার্সন ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত হবার লক্ষণসমূহ
কনভার্সন ডিসঅর্ডারের লক্ষণগুলো ঠিক কোন ধরণের পরিস্থিতিতে কার্যকর হয়ে উঠবে তা সঠিকভাবে বলা কঠিন। এটি জীবনের যে কোন সময় কার্যকর হয়ে উঠতে পারে। এ উপসর্গগুলো নিজে থেকে চালু বা বন্ধও করা যায় না। এ ডিসঅর্ডারের বিভিন্ন রকম লক্ষণ থাকে বা তা বিভিন্নভাবে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে উপস্থাপিত হতে পারে যা অনেক ক্ষেত্রে উপসর্গের প্রকটতার উপরও নির্ভর করে থাকে। এর উপসর্গগুলো শারীরিক মুভমেন্ট এবং ইন্দ্রিয়গুলোকে প্রভাবিত করতে পারে। উপসর্গগুলো একবার কিংবা স্ট্রেস তৈরিকারী পরিস্থিতি বারবার উপস্থাপিত হলে এর পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে ।

কনভার্সন ডিসঅর্ডারের উপসর্গগুলোকে মূলত তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা যেতে পারে, যথা-
• ইন্দ্রিয়জনিত লক্ষণ
• মোটর কার্যক্রম জনিত লক্ষণ
• খিঁচুনি

ইন্দ্রিয়জনিত লক্ষণ :
ইন্দ্রিয়জনিত লক্ষণের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- অন্ধত্ব বা টানেল ভিশন, সাময়িক বা সম্পূর্ণ বধিরতা, ত্বকে অনুভূতি লোপ পাওয়া বা হ্রাস পাওয়া, কথা বলতে সমস্যা হওয়া বা কথা বলতে না পারা।

মোটর কার্যক্রম জনিত লক্ষণ:
মোটর কার্যক্রম জনিত লক্ষণের মাঝে উল্লেখযোগ্য হলো- শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গে দূর্বলতা অনুভব করা, পক্ষাঘাত বা শরীরের কোন অংশে অনুভূতি না পাওয়া, শরীরের ভারসাম্যহীনতা, কোন কিছু গিলতে অসুবিধা হওয়া বা গলায় কিছু আটকে আছে তা মনে হওয়া ইত্যাদি।

খিঁচুনি:
ব্যক্তির খিঁচুনির সাথে উপযুক্ত অভ্যন্তরীণ শারীরিক প্রক্রিয়া দেখা যায় না। এক্ষেত্রে ব্যক্তির খিঁচুনির পাশাপাশি অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে কিংবা অনেক ক্ষেত্রে প্রতিক্রিয়াহীন হয়ে পড়ে।

উপরোক্ত তিনটি শ্রেণির সংমিশ্রণে কিছু লক্ষণ দেখা যেতে পারে যা ব্যক্তির জন্যে কষ্টদায়কও হতে পারে।

কনভার্সন ডিসঅর্ডার নির্ণয়ের উপায়সমূহ

কনভার্সন ডিসঅর্ডার মূলত Diagnostic and Statistical Manual of Mental Disorders এর মানদণ্ড অনুযায়ী নির্ণয় করা যায়। এ সকল উপায়সমূহ হলো-

  • শারীরিক মুভমেন্ট এবং ইন্দ্রিয়জনিত লক্ষণগুলো নিজে থেকে নিয়ন্ত্রণ না করতে পারা
  • নির্দিষ্ট স্ট্রেসজনিত পরিস্থিতির সম্মুখীন হলেই শারীরিক প্রতিক্রিয়াগুলো দেখা দেয়া
  • শারীরিক লক্ষণগুলো চিকিৎসাগতভাবে ব্যাখ্যা করতে না পারা
  • শারীরিক লক্ষণসমূহ দৈনন্দিন জীবনকে বাধাগ্রস্ত করা
  • এছাড়াও ব্যক্তির কনভার্সন ডিসঅর্ডারের লক্ষণসমূহ নিশ্চিত করার জন্যে প্রয়োজনে সিটি স্ক্যান,এক্স রে, ইলেক্ট্রোয়েনসেফালোগ্রাম, রক্তচাপ পরীক্ষা করা যেতে পারে।

কখন ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত?

উপরে বর্ণিত লক্ষণগুলো যদি ব্যক্তির বর্ণনা করা লক্ষণের সাথে মিলে যায়, তবে সে ক্ষেত্রে ব্যক্তিকে দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। এছাড়াও উক্ত লক্ষণগুলো আসলেই কোন শারীরিক বা স্নায়বিক গুরুতর সমস্যার কারণেও দেখা যেতে পারে বিধায় দেরি না করে তা নির্ণয় করে নেয়া উচিত। যদি নির্ণয় করার পর দেখা যায় যে, এটি একটি কার্যকরী নিউরোলজিক ব্যাধি, তবে তাৎক্ষণিক গৃহীত ব্যবস্থা ডিসঅর্ডারের লক্ষণগুলির অবস্থা উন্নত করতে পারে এবং ভবিষ্যতে সমস্যাগুলি প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে।

কনভার্সন ডিসঅর্ডারের কারণে সৃষ্ট জটিলতা

যদি উপযুক্ত সময়ে সঠিকভাবে কনভার্সন ডিসঅর্ডারের চিকিৎসা না করা হয়, তবে সে সকল লক্ষণগুলো স্থায়ী হয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে। এর ফলে রোগীর স্বাভাবিক জীবনযাপন বাধাপ্রাপ্ত হতে পারে।

কনভার্সন ডিসঅর্ডারের চিকিৎসা

সাধারণত বিভিন্ন ক্লিনিকগুলোতে এ ডিসঅর্ডারের চিকিৎসা দেয়া হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে প্রধানত রোগের পেছনে দায়ী থাকা স্ট্রেসজনিত পরিস্থিতিটিকে খুঁজে বের করা হয়। এছাড়াও থেরাপিস্ট এ ডিসঅর্ডারের লক্ষণগুলোর প্রকটতা কমিয়ে আনার জন্যে রোগীকে উপযুক্ত ইতিবাচক প্রণোদনা দিয়ে থাকেন যার ফলে রোগী স্ট্রেসজনিত পরিস্থিতিতে এ ধরনের উপসর্গের দ্বারা আক্রান্ত না হয়। এছাড়াও ব্যক্তিতে যে সকল থেরাপি দেয়া যেতে পারে, তা হলো-
• সাইকোথেরাপি
• ফিজিক্যাল থেরাপি (এটি স্ট্রেসজনিত পরিস্থিতির ফলে সৃষ্ট পেশীজনিত দৃঢ়তা বা খিঁচুনিকে শিথিলায়নে সহায়তা করে)
• গ্রুপ থেরাপি
• বায়োফিডব্যাক
• হিপোনসিস বা সম্মোহন থেরাপি
• রিল্যাক্সেশন থেরাপি এবং
• সাইকোট্রপিক মেডিকেশন বা ঔষধ সেবন (ডিসঅর্ডারের কারণে সৃষ্ট বিষণ্ণতা এবং উদ্বিগ্নতা দূর করতে সাহায্য করে)
উপরে উল্লেখিত উপায়গুলোর মাধ্যমে সহজেই কনভার্সন ডিসঅর্ডারকে নিরাময় বা কমিয়ে আনা সম্ভব হয়ে থাকে।

কনভার্সন ডিসঅর্ডারের প্রতিরোধ

এটি সবসময় সব রোগের ক্ষেত্রেই সত্য যে, রোগ নিরাময় অপেক্ষা তা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ সর্বাধিক কাম্য। কনভার্সন ডিসঅর্ডারের ক্ষেত্রেও তা ব্যতিক্রম নয়। কনভার্সন ডিসঅর্ডার প্রতিরোধের প্রাথমিক উপায় হলো স্ট্রেসজনিত পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাবার উপায় খুঁজে বের করা এবং যথাসম্ভব উপায়ে মানসিক আঘাত এড়ানোর চেষ্টা করা। এছাড়াও আর যে উপায়ে এ ডিসঅর্ডারটি প্রতিরোধ করা সম্ভব, তা হলো-
• যে কোন মানসিক ব্যধিতে আক্রান্ত হলে সঠিক সময়ে চিকিৎসা গ্রহণ করা
• ভালো কাজ করা এবং জীবনের ভারসাম্য বজায় রাখা
• সকলের সাথে ইতিবাচক সম্পর্ক তৈরি করা এবং তা বজায় রাখার চেষ্টা করা
• একটি নিরাপদ ও শান্ত পারিবারিক পরিবেশ সৃষ্টি করা

উপরে উল্লেখ করা অনেক পরিস্থিতিই হয়তো আমার নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে যতটুকু সম্ভব এসকল বিষয়গুলোকে কার্যকরীভাবে মোকাবেলা করা উচিত কারণ যারা এসকল ব বিষয়গুলোকে কার্যকরীভাবে মোকাবেলা করতে পারে তারা অনেকাংশেই তাদের চাইতে ভালো থাকে যারা বিরূপ পরিস্থিতি সঠিকভাবে মোকাবেলা করতে অক্ষম। সর্বোপরি, চাপ এবং মানসিক আঘাত হ্রাস করা কনভার্সন ডিসঅর্ডার প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রে কার্যকর হতে পারে।

অতএব, আমাদের জীবনে নানা ধরনের স্ট্রেস বা উদ্বেগজনিত পরিস্থিতি আসতেই পারে। এসকল পরিস্থিতি উপযুক্ত উপায়ে মোকাবেলা করা অথবা সময় থাকতেই কনভার্সন ডিসর্ডারের কোন লক্ষণ দেখা দিলে উপযুক্ত থেরাপিস্টের শরণাপন্ন হওয়া উচত। আপনার সঠিক সময়ের একটি সঠিক পদক্ষেপ এ ডিসঅর্ডারে ফলে তৈরি হওয়া প্রতিবন্ধকতা থেকে মুক্তি দিতে পারে এবং আপনার আগামীকে করে তুলতে পারে আরো সুন্দর, স্বাভাবিক ও আনন্দময়।

লিখেছে – অধরা।

কাউন্সিলিং সাইকোলজিস্ট, ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট: কখন কাকে প্রয়োজন?

Share

প্রফেশনাল সাইকোলজিস্টরা কেউ নিজেদের পরিচয় দেন ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট হিসেবে, আবার কেউ পরিচয় দেন কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট হিসেবে। এদের মধ্যে পার্থক্য কী? মানসিক স্বাস্থ্যসেবার জন্য কার কাছেই বা যাবেন?
প্রথমে বলে নেয়া উচিত দুটিই গুরুত্বপূর্ণ। ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট হতে যেমন এম. ফিল ডিগ্রি নেয়া আবশ্যক, কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট হতে গেলেও তা আবশ্যক।

পার্থক্য বোঝার সুবিধার্থে শব্দদুটির মূলের দিকে তাকানো যাক। ক্লিনিক্যাল শব্দটির উৎপত্তি গ্রিক ক্লাইন শব্দ থেকে, যার অর্থ হচ্ছে বিছানা। অর্থাৎ ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্টদের কাজ হচ্ছে শয্যাশায়ী, আরো সঠিকভাবে বলতে গেলে গুরুতর অসুস্থদের চিকিৎসা করা।

স্কিৎজোফ্রেনিয়া, ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেশন জাতীয় রোগ যেগুলো মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপনকে একেবারে থামিয়ে দেয়, এগুলোই হচ্ছে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্টদের ক্ষেত্র। বিভিন্ন মানসিক রোগের চিহ্নিতকরণ, চিকিৎসা, গবেষণা সংক্রান্ত কাজ করেন ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্টরা। এজন্য ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্টদের পাওয়া যায় বিভিন্ন মেন্টাল ইনস্টিটিউটে।

অন্যদিকে কাউন্সেলিং শব্দটি এসেছে ল্যাটিন কনসুলেয়ার হতে, যার অর্থ পরামর্শ দেয়া (উল্লেখ্য, কনসাল্ট শব্দটির উৎপত্তিও এখান থেকে)। ঐতিহাসিকভাবে, কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্টদের কাজ ছিল মানুষকে জীবনের নানা ক্ষেত্রে পরামর্শ দেয়া। স্ট্রেস, সামাজিক সম্পর্ক, সিদ্ধান্ত নিতে জটিলতা এসব ক্ষেত্রে সাহায্য দিয়ে থাকেন কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্টরা। অর্থাৎ এই সেবা গ্রহণকারীরা নেসেসারিলি অসুস্থ নন। কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্টরা কাজ করেন মানসিক রোগ প্রতিরোধে। মোটা দাগে তাঁদের কাজ হচ্ছে একটি সুস্থ জনগোষ্ঠীকে সাহায্য করা। এ কারণে উন্নত বিশ্বে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস প্রভৃতি জায়গায় কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্টদের নিয়োগ দেয়া হয়ে থাকে। বাংলাদেশেও এর প্র্যাকটিস শিগগিরই শুরু হতে যাচ্ছে।
তবে কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্টদের সাধারণ কাউন্সেলরদের সাথে গুলিয়ে ফেললে চলবে না। একজন কাউন্সেলর শুধুই কাউন্সেল দেন। কাউন্সেলর হতে খুব বেশি কিছুর প্রয়োজন হয় না। মানুষের কথা শোনার ক্ষমতা থাকতে হয় এবং সেই সাথে সামান্য প্রশিক্ষণ নিয়ে নিলেই যথেষ্ট। আর কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্টরা হচ্ছেন বিশেষজ্ঞ। তাঁদের কাজের পরিধি ব্যাপক।
বর্তমানে ক্লিনিক্যাল ও কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্টদের কাজে ওভারল্যাপিং হয় প্রচুর। কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্টরাও রোগ শনাক্ত করেন, সাইকোথেরাপি দিয়ে থাকেন। মানসিক রোগ সংক্রান্ত গবেষণায় ভূমিকা রাখেন। আবার ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্টরাও রোগীদের কাউন্সেল দেন। এ কারণে আজকাল অনেকে প্রস্তাব করছেন এ দুটি বিষয়ের পার্থক্য তুলে দিতে।

ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট ও কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট উভয়েই গুরুত্বপূর্ণ, উভয়েই এম. ফিল ধারী। কখন কার কাছে যেতে হবে সেটি নির্ভর করে মানসিক সমস্যার প্রকটতার ওপর। আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যকে ঠিক রাখতে অথবা শুধু পরামর্শ নিতে হলেও সাইকোলজিস্টদের কাছে যাওয়ার প্রচলন বাড়ানো উচিত।

লেখা: যারিন আনজুম কথা।

ব্যক্তিত্বের ধরণ

Share

personality-itsok-nujhat

কোন মানুষের কথার ধরণ, চালচলন বা আচার ব্যবহার দেখে আমরা বলে উঠি ‘বাহ! উনি তো বেশ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ!’ আসলে এই ব্যক্তিত্ব টা কি?

মনোবিজ্ঞানের ভাষায় ব্যক্তিত্ব হলো প্রত্যকটি মানুষের আলাদা রকমের চিন্তার ধরণ,আচরণ এবং অনূভুতি৷ তা হলে আমরা বলতে পারি প্রত্যেকটি মানুষ একেক রকমের ব্যক্তিত্বের অধিকারী৷ তো এই ব্যক্তিত্বের ধরণ কার্ল ইয়াং ৩টি ডাইমেন্সনে ভাগ করেন৷ প্রত্যকটি ডাইমেন্সন আবার ২ ভাগে বিভক্ত:

১/ প্রকাশের ধরণ :

ক) এক্সরোভার্টেড(E)

খ) ইন্ট্রোভার্টেড(I)

এক্সরোভার্টেড মানুষ মিশুক হয়, তারা খুব সহজেই মানুষের সাথে ভাব জমাতে পারে৷ অন্যদিকে, ইন্ট্রোভার্টেডরা নিজেদের মত থাকতে পছন্দ করে , কোলাহল তাদের অপছন্দ৷

২/ উপলব্ধির ধরণ:

ক) সেন্সিং(S)

খ) ইন্টিউশন(N)

যাদের তথ্য উপলব্ধি তাদের ৫টি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে করে , ফ্যাক্ট আর ডিটেল অনুযায়ী পারসিভ বা উপলব্ধি করে তারা সেন্সিং এর মাধ্যমে পারসিভ করে৷ অপরদিকে, যারা তথের প্যাটার্ন ,প্রভাব বা অর্থের প্রাধান্য দেয় তারা ইন্টিউশনে অন্তর্ভুক্ত৷

৩/ বিচারের ধরণ:

ক) চিন্তা (T)

খ) অনূভুতি(F)

যারা যুক্তির মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেয় তাদের চিন্তা বা থিংকিং ধরণে ফেলা যায়৷ ইমশন বা আবেগ দিয়ে যারা সিদ্ধান্ত নেয় কোন যুক্তি ছাড়াই তাদের ফিলিং বা অনূভুতি ক্যাটাগরিতে ফেলা যায়৷

ইসাবেল ব্রিগস ম্যায়ার ইয়াং এর ৩টি ডাইমেন্সানের সাথে আরেকটি যোগ করেন৷ মানুষের জীবন চলনের উপর ২ ভাগে ম্যায়ার ভাগ করেন৷

জাজিং(J)  ভারসেস পারসিভিং(P)৷

যারা তাদের জীবনের লক্ষ অনুযায়ী কাজ করতে থাকে এবং কোন ধরণের পরিবর্তন আনতে নারাজ তারা জাজিং এ অন্তর্ভুক্ত৷ এবং যারা ফ্লেক্সিবাল ভাবে তাদের জীবন লক্ষের দিকে এগিয়ে যায় তারা পারসিভিং ধরণের৷ পারসিভিং ধরণের মানুষ একটি বিকল্প প্ল্যান তৈরী রাখে৷

এই ৪ ডাইমেন্সনের ব্যাক্তিত্বের ধরণ বিন্যাস করলে ১৬ ধরণের ব্যাক্তিত্ব পাওয়া যায়৷ তার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা নিচে দেয়া হল:

১/ ISTJ(The Duty Fulfiller):  এই ধরণের মানুষগুলো গোছানো, পরিশ্রমী এবং তাদের নির্দিষ্ট লক্ষ্যের দিকে নিরবে কাজ করে যায়৷ তারা খুবই দায়িত্ববান , অন্যের উপর নির্ভরশীল,খুবই মনোযোগী এবং নাছড়বান্দা হয়৷ শান্তশিষ্ট পরিবেশে থাকতে তারা পছন্দ করে৷

২/ ISTP(The Mechanic): এইসব মানুষ ‘কি’ এবং ‘কেন’ প্রশ্নের জবাব খুঁজতে ব্যস্ত থাকে৷ তারা সাধারণত চুপচাপ,নিজেকে গুটিয়ে রাখে, রিস্ক নিতে পছন্দ করে এবং বর্তমান নিয়ে বাঁচে৷ বন্ধুদের সাথে বিশ্বস্ত হলেও তারা নিজের লক্ষে পৌছানোর জন্য নিয়ম ভাঙ্গে৷ তারা মেকানিকাল কাজে প্রচুর দক্ষ৷

৩/ ISFJ(The Nurturer): তারা চুপচাপ,সদয়,ন্যয়বান,বাস্তববাদী এবং সংস্কৃতিমনা৷ অন্যের কষ্ট তারা তীব্রভাবে অনুভব করে এবং পরোপকারী৷

৪/ ISFP(The Artist): এইধরণের মানুষ সংবেদনশীল, গম্ভীর, শান্ত, বিশ্বস্ত হয়৷ তারা খুবই শান্তিপ্রিয় মানুষ এবং ঝামেলামুক্ত থাকার চেষ্টা করে৷ নান্দনিক সৌন্দর্যের কদর খুব ভাল ভাবে করে , তারা মুক্তমনা ,বর্তমানে বাঁচে এবং স্বাধীনচেতা৷

৫/ INFJ(The Protector): তারা প্রভাবশালী, সংবেদনশালী এবং অন্যের প্রতি অতিরিক্ত উদ্বিগ্ন থাকে৷ নিজের আদর্শে সবসময় লেগে থাকে৷একটা কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তারা হাল ছাড়ে না৷

৬/ INFP(The Idealist): তারা শান্ত, আদর্শিক, চিন্তাশীল, খুবই বিশ্বস্ত৷ সাধারণত তারা ভাল লেখক৷ নিজের আদর্শে চলে, তারা মানুষের পরিস্থিতি খুব ভাল বুঝে এবং পরোপকারী৷ তারা সম্ভাবনা হিসেবে পটু৷

৭/ INTJ(The Scientist): তারা স্বাধীনচেতা, বিশ্লেষণাত্মক, সংকল্পিত, কর্মদক্ষ এবং জ্ঞানের মূল্যায়ন করে৷ দীর্ঘ পরিসরে চিন্তা করে৷তাদের কর্মক্ষমতা খুবই ভাল এবং তারা ন্যাচারাল লিডার৷

৮/ INTP(The Thinker): যুক্তিবাদী, সৃজনশীল, চুপচাপ ,নিজেকে গুটিয়ে রাখে ৷ নতুন আইডিয়ায় তারা খুবই উদ্দীপ্ত হয়৷ তারা জ্ঞান, কর্মদক্ষ এবং যুক্তির কদর করে৷ কোন কিছুর ব্যাখা তারা খুব ভাল বুঝে৷

৯/ ESTP(The Doer): তারা ফ্রেন্ডলি, কাজ ওরিয়েন্টেড এবং অনুকূল পরিবেশে মানিয়ে নিতে পারে৷ তারা অধৈর্যশীল, তাই তাদের কোন কাজের রেজালটের জন্য অপেক্ষা করা কষ্টকর৷ বন্ধুদের প্রতি খুব বিশ্বস্ত কিন্তু কোন কাজ হাসিলের জন্য তারা বিশ্বাসভঙ্গ করতে পারে৷

১০/ESTJ(The Guardian): তারা প্র্যাক্টিকাল, গোছানো, এ্যাথলেটিক৷ তাদের থিউরি তে আগ্রহ কম যদি না প্র্যাক্টিকালী প্রয়োগ করা যায়৷ তারা বিশ্বস্ত, পরিশ্রমী, এবং নেতৃত্ব দিতে পছন্দ করে৷ একজন ভাল নাগরিক হিসেবে তাদের সুনাম আছে৷

১১/ ESFP(The Performer): মানুষের সাথে মিশতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করে৷ অন্যের জন্য তারা পার্ফম করে আনন্দ পায়৷ তারা নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পছন্দ করে ,পরোপকারী এবং নিজেকে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রাখতে চায়৷

১২/ ESFJ(The Caregiver): তারা পরের স্বার্থে ঝাপিয়ে পরে নিজেরদের চিন্তা না করে৷ তারা নিজেরদেরকে অন্যের প্রতি দায়িত্ববান মনে করে৷ নিজেরদের ভালো লাগার জন্য তাদের পজিটিভ রেইনফোর্সমেন্ট দরকার হয়৷

১৩/ ENFP(The Inspirer): তারা উদ্যমী ,আদর্শবাদী ,সৃজনশীল, মুক্তমনা৷ নতুন আইডিয়ায় তারা উদ্দীপ্ত হয় কিন্তু পুঙ্খানুপুঙ্খ কাজে বিরক্ত হয়৷

১৪/ ENFJ(The Giver): খুব ভাল মিশুক, সংবেদনশীল, একা থাকতে অপছন্দ করে৷ অন্যরা তাকে নিয়ে কি ভাবলো তা নিয়ে চিন্তিত থাকে৷ সবকিছু মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করে৷ তাদের সোশ্যাল ম্যানেজিং স্কিল চমৎকার৷ তারা পরোপকারী৷

১৫/ ENTP(The Visionary): তারা সৃজনশীল, বুদ্ধিদীপ্ত৷ ডিবেট করে তারা আনন্দ পায় ,নতুন আইডিয়ায় উদ্দীপ্ত হয় কিন্তু রুটিন ওয়ার্ক তাদের পছন্দ নয়৷ তারা স্পষ্টভাষী, মানুষের সঙ্গে থাকতে স্বাচ্ছন্দবোধ করে৷ কোন কিছুর যুক্তিসঙ্গত সমাধানে তারা পারদর্শী৷

১৬/ ENTJ(The Executive): তারা স্পষ্টভাষী, জিদপূর্ণ, বুদ্ধিমান, পাবলিক স্পিকিং এ ভাল৷ তারা নেতৃত্বের অধীনে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দবোধ করে এবং অনিয়ম সহ্য করে না৷ এই ধরণের মানুষ জ্ঞান ও কর্মদক্ষতার মূল্যায়ন করে৷

পৃথিবীর সব মানুষ উপরের ১৬টির কোন না কোন ব্যাক্তিত্বের অন্তর্ভুক্ত৷ এই ব্যাক্তিত্বের ধরণেই একটি মানুষকে ডিফাইন করে৷

লিখেছেন – নুজহাত জাহানারা