প্যারেন্টিং স্টাইল ও সন্তানের ভবিষ্যৎ

Share

‘অমুকের ছেলে পরীক্ষায় ফার্স্ট হতে পারলে তুমি কেন পারবে না?’- আমাদের দেশে এইরকম কথা শুনেনি এইরকম ছেলেমেয়ে পাওয়া ভার। অনেক ছেলেমেয়ে ছোটবেলা থেকেই এই কারণে হীনমন্যতায় ভোগে। বাবা মা আমাদের সবচেয়ে বড় শুভাকাঙ্ক্ষী- এই বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু সন্তানের ভালো হবে চিন্তা করে বাবা মায়েরা যা কিছু করেন তার সবই কি ঠিক?

শুধু খাদ্য, পোশাক, ভালো স্কুলে ভর্তি করানো ইত্যাদি মৌলিক চাহিদা পূরণ করা পর্যন্তই অভিভাবকের দায়িত্ব সীমাবদ্ধ না।সন্তানের মনস্তত্ব সঠিকভাবে বুঝা ও তার মানসিক বিকাশের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করাও অভিভাবকের গুরুদায়িত্ব। এই প্যারেন্টিং স্টাইলের উপর সন্তানের ভবিষ্যৎ আচরণ অনেকখানি নির্ভর করে।

যেসব পিতামাতা তাদের সন্তানদের যথেষ্ঠ সময় দেন না তাদের সন্তানদের আচরণে পরবর্তীতে aggressiveness আর insecurity লক্ষণীয়। আবার সন্তানের প্রতি অতিরিক্ত সংবেদনশীল (over protective) বাবা মায়েদের কারণে সন্তানরা অতিরিক্ত নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। অনেক পিতামাতাই সন্তানের ন্যায় অন্যায় সকল আবদার পূরণ করে থাকেন। সন্তানের আবদার পূরণ করাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু অনেক সময়ই দেখা যায় সন্তান আরেকজনের খেলনা তার অনুমতি ছাড়াই ব্যবহারের অন্যায় জেদ করে থাকে। আর পিতামাতা তাদের এই আবদার রক্ষাও করে থাকেন। এতে করে শিশুরা অন্যের খেলনা কেড়ে নিতে শিখে। পরবর্তীতে তারা আক্রমণাত্নক, অন্যের ইচ্ছা বা আবেগের প্রতি অসহিষ্ঞু এবং অবাধ্য হয়ে উঠে।

সমাজ মনোবিজ্ঞানীরা শিশুর সামাজিকীকরণে প্যারেন্টিং স্টাইলের প্রভাব নিয়ে প্রচুর গবেষণা করেছেন। মনোবিজ্ঞানীরা মূলত তিন ধরণের প্যারেন্টিং স্টাইল চিহ্নিত করেছেন।

১. Authoritarian

২. Permissive

৩. Authoritative

Authoritarian প্যারেন্টিং এ পিতামাতার প্রতি চরম আনুগত্য প্রদর্শন করা হয়। শিশুদের মতামত বা ইচ্ছাকে কম মূল্যায়ন করা হয়। শিশুর আচরণ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য শাস্তির প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়। এতে করে পিতামাতা ও শিশুদের সম্পর্ক আন্তরিক ও বন্ধুত্বপূর্ণ হওয়ার বদলে শিশুর মধ্যে ভীতি ও আনুগত্যের সৃষ্টি করে। Authoritarian প্যারেন্টিং শিশুর আত্নবিশ্বাস গঠনে বিরূপ ভূমিকা পালন করে। পরবর্তী জীবনে ব্যক্তির আচরণে রাগ, বিতৃষ্ঞা, ক্ষোভ, ডিপ্রেশন দেখা দিতে পারে।

Permissive পিতামাতা শিশুর উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করেন না বরং শিশুদের নিজেদের অভিব্যক্তি প্রকাশের সুযোগ সৃষ্টি করেন। শিশুদের শাস্তির ভয় দেখিয়ে নিয়ম শৃঙ্খলা বা আদব কায়দা শেখানোর পরিবর্তে এর পেছনের যৌক্তিক কারণগুলো বুঝিয়ে নিয়ম কানুন মেনে চলতে উৎসাহিত করেন। যেমন, কোন শিশু জোর করে অন্যের খেলনা নেওয়ার আবদার করলে পিতামাতা যদি ছোট বয়সেই তাদের বুঝিয়ে বলেন যে অন্যের জিনিস তার অনুমতি ব্যতীত ব্যবহার করা উচিত না- তাহলে তারা তাদের আচরণে পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবে। পরবর্তীতে তারা অন্যের ইচ্ছা অনিচ্ছার প্রতিও শ্রদ্ধাশীল হবে।

মনোবিজ্ঞানীরা authoritative প্যারেন্টিং স্টাইলকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। Authoritative পিতামাতা যেমন শিশুর নিজস্ব ব্যক্তিত্বকে গুরুত্ব দেন তেমনিভাবে তারা সামাজিক মূল্যবোধ শিখানোর প্রতিও যত্নশীল। Authoritative প্যারেন্টিং এ ব্যক্তির সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্বাধীনতা, মতামত, ব্যক্তিত্বকে গুরুত্ব সহকারে মূল্যায়ন করা হয়। শিশুদের আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলা, সামাজিকীকরণ, সফল ব্যক্তিত্ব গঠনে authoritative প্যারেন্টিং সবচেয়ে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।গবেষণায় দেখা গেছে, authoritative প্যারেন্টিং এ বেড়ে উঠা শিশুর পরবর্তী জীবনে ডিপ্রেশন বা অপরাধ প্রবণতার হার অনেক কম।

প্রতিটি শিশু প্রাথমিক গুরুত্বপূ্র্ণ আচরণ পরিবার তথা পিতামাতা থেকেই  শিখে। তাই একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গড়ে তোলার জন্য সঠিক প্যারেন্টিং এর প্রতি পিতামাতার যত্নবান হওয়া উচিত।  -সামিরা মাহজাবিন

Loved this article? Share with your community and friends.

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share