সামাজিক ভীতি

Share

সামাজিক ভীতি (Social Phobia) এর মানে হল সামাজিক পরিস্থিতিতে ভয় লাগা বা অস্বস্তিবোধ করা । এটি কম বেশী সব মানুষেরই লাগতে পারে। তবে কেউ কেউ এতই অস্বস্তিবোধ করেন সামাজিক পরিবেশে, বিশেষ করে নতুন পরিবেশে বা অপরিচিত পরিবেশে যে তারা স্বাভাবিক আচরন করতে পারে না। তাঁরা ঘামতে থাকেন, অহেতুক ভ্য় কাজ করে। ব্যাক্তি সামাজিক পরিবেশে যেতে চায় না।

যা বাক্তির ব্যাক্তিগত , সামাজিক, ও পেশাগত জীবন ব্যাহত হয় , তার কাজ করার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়, তখন একে বলে সামাজিক ভীতি বা সামাজিক উদ্ধেগজনিত বিকৃতি (Social Anxiety Disorder)।

এটা এক ধরনের মানসিক রোগ । এই ভীতিতে আক্রান্ত ব্যাক্তি তাকে মুল্যায়ন করা হবে, তাকে যাচাই করা হবে, অন্য কারও কাছে তার কাজ উপস্থাপন করতে হবে, এমন পরিস্থিতিতে অতিরিক্ত ভয়, লজ্জা , উদ্ধেগ কাজ করে। নতুন লোকের সাথে কথা বলা, জনসমুক্ষে কিছু করতে , নাচ, গান, বক্তৃতা দিতে ভয়, লজ্জা কাজ করে।

সামাজিক ভীতি দুই ধরনের হয়।

যখন ব্যাক্তি একটি পরিস্থিতিতে ভয় পায়, এবং এড়িয়ে চলে, তখন তাকে বিশেষ সামাজিক ভীতি বলে। আর যখন ব্যাক্তি অনেকগুলো সামাজিক পরিস্থিতিতে উদ্ধিগ্ন ও ভীত হয়, তখন তাকে সাধারন সামাজিক ভীতি বলে। যাদের এই ভীতি থাকে , তারা একলা একলা থাকে, সামাজিক পরিবেশে কিছু করতে বা তার যেতে ইচ্ছা করে, কিন্তু যেতে পারে না। মনের ভেতর একটি খুঁতখুঁত ভাব থাকে।আমি হয়তো পারব না বা আমি যদি যাই কি হবে? মানুষ আমাকে দেখে হাসাহাসি করবে। বাকিরা কী ভাবছে? সারাক্ষন তাঁর মনের বেতর এসব চিন্তা হতে থাকে।

এই ভীতির কারন হিসেবে মনোবিজ্ঞনীদের বিভিন্ন গবেষণা থেকে যে তথ্য পাওয়া যায়, ব্যাক্তির নেতিবাচক কোন অভিজ্ঞতা, পরিবারের অন্য সদস্য যেমন মা, বাবা, কার ও ভীতি থাকলে ছেলে মেয়েদের মধ্যে আচরনগত শিক্ষা থেকে হতে পারে। এছাড়া যেসব শিশুরা ছোট বেলায় পারিবারিক সংগাত ও টিজিং এর শিকার হয়, অপমান, উপহাস বা কঠিন সমালোচনার সম্মুখীন হয়। এছাড়া যেসব বাবা মায়েরা সন্তানদের প্রতি অতি রক্ষনশীল হয়, বা নিয়ন্ত্রন করে ,পরবর্তীতে তারা সামাজিক ভীতিতে আক্রান্ত হয়। জৈবিক কারন হিসেবে বলা হয় , আমাদের মস্তিষ্কে এমিগঢালা (amygdala) নামক একটি অংশ যা ভয় প্রতিক্রিয়া , নিয়ন্থ্রনে ভুমিকা পালন করে। যার একটি অতিরিক্ত এমিগঢালা আছে, তাদের একটি অতিরিক্ত ভয় , উদ্ধেগ কাজ করে, সামাজিক পরিস্তিতিতে তা বৃদ্ধি পায়। এই রোগের প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশী শুরু হয় বয়সন্ধিতে, যখন ব্যাক্তির জীবনে সামাজিক সচেতনতা এবং অন্যের সঙ্গে পারস্পরিক প্রতিক্রিয়ার গুরুত্ব বেড়ে যায়। শিশুদের মধ্যে ও এই রোগ দেখা যায়।
সামাজিক ভীতিতে আক্রান্ত ব্যাক্তি যেসব শারীরিক প্রতিক্রিয়ার লক্ষন দেখা যায়, বিশেষ পরিস্থিতিতে বা সামাজিক পরিবেশে কিছু করতে ঘাম হওয়া, বমি ভাব হওয়া, নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসা, মাথা ঘোরা, পেশীতে টান টান অনুভব করা। অনেক সময় জ্বর হয়। পরবর্তীতে বাক্তি যেসব আচরণগত যেসব সমস্যা দেখা যায় , আত্ববিশ্বাসের ওভাব, একাকীত্ব অনুভব করা, সমালোচনা নিতে না পারা, সামাজিক দক্ষতার অভাব , নিজেকে দোষারোপ করা,মাদকাসক্ত হওয়া , আত্মহত্যার প্রচেষ্ঠা ইত্যিদি।

 

সামাজিক ভীতিতে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সাধারণত মনোবিজ্ঞানিরা কাউন্সেলিং, ও সাইকথেরাপী, আচরণগত থেরাপী ব্যবহার করে থাকেন ।এছড়াও মানসিক ডাক্তাররাও চিকিৎসা করে থাকেন । সময়্মত সঠিক মানসিক পরিচর্যা পেলে রোগীর সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠা সম্ভব ।

লিখেছেন – জাকিয়া সুলতানা

 

Loved this article? Share with your community and friends.

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share