‘দোস্ত, কিছুই ভাল্লাগেনা, আমি অনেক ডিপ্রেসড!’ বর্তমান সময়ে প্রায় মানুষের মুখেই এই কথাটা শোনা যায়। কিন্তু আসলেই কি সবাই ডিপ্রেশনের শিকার?
প্রায় সময়ই আমরা মন খারাপ থাকা (sadness) এবং বিষন্নতাকে (depression) এক করে ফেলি। কিন্তু বিষয় দুটি এক নয়। মানুষের মধ্যে basic কিছু আবেগ বা emotion থাকে, sadness তার মধ্যে একটি। আমাদের মন ভালো থাকাটা যেমন খুব স্বাভাবিক, তেমনি মন খারাপ থাকাটাও খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। যেমন, আপনার কোন একটা পরীক্ষায় আপনার ফলাফল খুবই খারাপ হল। সেদিন আপনার মন খারাপ থাকাটাই কি স্বাভাবিক নয়? অথবা প্রতিদিনের প্রচুর ক্লাস, পড়া, টিউশন আর কাজের চাপের কারণে বা কর্মক্ষেত্রে বিরূপ পরিবেশের কারণে দিন শেষে কিছুই ভালো না লাগা। এখানে আপনার ভালো না লাগার কারণ ডিপ্রেশন না, কাজের চাপ বা stress। পরবর্তীতে কাজের চাপ সামলানো শিখে গেলে আমরা অনেকটা স্বস্তি বা আনন্দ বোধ করি। এখানেই মূলত মন খারাপ আর ডিপ্রেশনের মধ্যে পার্থক্যটা।
ডিপ্রেশন একটি ক্লিনিকাল ডিজঅর্ডার। আমাদের শরীরে কোন অসুখ আছে কি না তার জন্য যেমন diagnosis দরকার, তেমনিভাবে ডিপ্রেশন নির্ণয়ের জন্যও কিন্তু diagnosis দরকার। ডিপ্রেশনের অনেকগুলো লক্ষনের মধ্যে একটি হচ্ছে sadness। প্রায় ক্ষেত্রেই দেখা যায় ডিপ্রেশনের শিকার মানুষ কোন কাজেই আনন্দ খুঁজে পায়না। প্রতিদিন আড্ডা দেয়া মানুষটা ধীরে ধীরে নিজেকে গুটিয়ে নেয়া শুরু করে। প্রিয় সিরিজের নতুন এপিসোড রিলিজ হলে সবার মাঝে যে excitement কাজ করে, ডিপ্রেশনে থাকলে সেই excitement এর ছিটেফোঁটাও হয়ত কারও মাঝে দেখা যায়না। পারিবারিক বা সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণে অনীহা প্রকাশ পায়। নিজের প্রতি, নিজের জীবনের প্রতি মানুষ খুবই নেতিবাচক ও হতাশ হয়ে পড়ে এবং কাজ করার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। খাওয়া, ঘুম, প্রতিদিনের ছোট বড় কাজে মানুষ অনিয়মিত হয়ে পড়ে । মানুষ নিজের উপর যেন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। এই লক্ষণগুলো টানা দুই সপ্তাহের অধিক সময় ধরে থাকলে ব্যক্তি ডিপ্রেশনে ভুগছে বলে ধরা হয়। চারপাশে ঘটে যাওয়া কিছু আত্মহত্যার কারণ বিশ্লেষণ করলে আমরা দেখি তারা প্রায় সবাই দীর্ঘদিন ধরে ডিপ্রেশনের শিকার ছিল।
মন খারাপ ও ডিপ্রেশন কেন হয়?
মন খারাপের কারণ আমাদের সবারই জানা। কারও সাথে মনোমালিন্য হলে, প্রিয় কোন জিনিস হারিয়ে গেলে, প্রিয় দল খেলায় হারলে ইত্যাদি কারণে আমাদের মধ্যে যে আবেগ বা ইমোশনের উদ্রেক হয় সেটা sadness। অপরদিকে ডিপ্রেশনের কারণগুলো বেশ সূক্ষ্ণ ও জটিল। বিভিন্ন মানুষের ডিপ্রেশনের কারণ ভিন্ন ভিন্ন এবং তাদের জীবনের বিভিন্ন সময়ের ঘটনা বিশ্লেষণ করে কারণগুলোর বিস্তৃত ও সঠিক বর্ণনা প্রয়োজন।
মন খারাপ থাকা আমাদের প্রতিদিনের রুটিনকে বাধাগ্রস্ত করেনা, অপরদিকে ডিপ্রেশনে ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতম কাজ করার জন্যও যেন নিজের সাথে যুদ্ধ করা লাগে। আমাদের মন খারাপ থাকাটা সাময়িক। পছন্দের কোন কাজ করলে বা প্রিয়জনের সাথে সময় কাটালে আমাদের মন ভালো হয়ে যায়। কিন্তু ডিপ্রেশন দূর করার জন্য প্রফেশনাল হেল্প বা কাউন্সেলিং দরকার।
জীবনে ভালো থাকার তাগিদ অনুভব করতে একটু আধটু মন খারাপের দরকার আছে। একটা দিন খারাপ যেতেই পারে। তাকে বিষন্নতা না ভেবে ইতিবাচক চিন্তার মাধ্যমে জীবনকে নতুনভাবে দেখাটা জরুরি।
লিখেছেন – সামিরা