শুভ এইবার এইচ.এস.সি পরিক্ষা দিয়েছে। সে এখন কোথায় এবং কী নিয়ে পড়বে তা নিয়ে খুব বেশী কনফিউজড। বাবা-মা বলছে মেডিকেলে পড়তে, নিজের ইচ্ছা রসায়ন কারণ তার রসায়ন পড়তে অসম্ভব ভাল লাগে, কিন্তু শুভর বন্ধুরা বলে সে যেহেতু সে ইংলিশে ভাল তাকে আইবিএ নিয়ে পড়তে। এখন শুভর মনে হয় মেডিকালে পড়লে তার বাবা-মা খুশি হবে, আবার নিজের ইচ্ছা কেমিস্ট হওয়ার, কিন্তু বন্ধুরা যা বলছে সেটা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারছে না। খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে শুভর। কারণ তার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভর্তি পরিক্ষার প্রস্ততি নিতে হবে। হাতে বেশি সময় নেই তার। যতদিন যায় ততই চাপে পড়ে শুভ। কোন দিকে যাবে সে? বাবা-মার মেডিকেলে যেতে বলার চাপ মেনে নিবে, নিজের ভাল লাগাকে গুরুত্ব দিবে নাকি বন্ধুদের কথা শুনবে? নিজের সিদ্ধান্তহীনতাবোধে চরম হতাশ শুভ। মেজাজ খিটখিটে হয়ে গেছে, পরিবার ও বন্ধুদের সাথে বাড়ছে দূরত্ব, ভাল লাগার কাজও এখন আর করতে পারে না। সারাক্ষণ মাথায় ঘুরতে থাকে ‘আমি এখন কি করব?’ চিন্তার চাপে সে এখন ছোটখাট সিদ্ধান্ত নিতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। বন্ধুরা তাকে ‘কনফিউজড শুভ’ নামে ডাকে আজকাল।
উপরে আমরা দেখলাম শুভ সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে। সময়ের প্রয়োজনে কি করতে হবে সেটা বুঝতে না পারাই সিদ্ধান্তহীনতা। জীবনের প্রত্যেক মুহূর্তে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হয় এবং মাঝে মাঝে সিদ্ধান্তহীনতা খুবই স্বাভাবিক বিষয়। যেমন কোন জামাটা পড়ে বাইরে যাব, রেস্টুরেন্টের মেন্যু দেখে বুঝতে না পারা কোনটা রেখে কোনটা ওর্ডার করবে ইত্যাদি। কিন্তু সিদ্ধান্তহীনতার কারণে যদি দৈনন্দিন জীবনের ব্যাঘাত ঘটে তাহলে এটা চিন্তার বিষয়।
সিদ্ধান্তহীনতা থেকে বের হয়ে আসার জন্য কিছু উপায় মেনে চলা যায়। যে বিষয় নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতা ভুগছে সেটি একটি নোটবুকে লিখা এবং কোন সিদ্ধান্ত নিলে কী হবে সেটি লিখে রাখা। সেই সময়ে ভেবে দেখা কোন সিদ্ধান্ত নিলে হলে কি আউটকাম আসবে। নিজেকে প্রশ্ন করা, ‘আমি কি এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মেনে চলতে পারব?’ শুধু আউটকাম চিন্তা করলে হবে না, খুব সূক্ষ্ম ভাবে এর ফলাফলের দিকে তাকাতে হবে। যেমন, ডাক্তার হলে মাথায় রাখতে হবে দিন-রাত যেকোন সময়ে জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে যেতে হবে, পরিবার ও নিজের জন্য খুব একটা সময় ব্যয় করা যাবে না। তারপর ভেবে দেখা, নিজের আদর্শের সাথে সিদ্ধান্তটা যাচ্ছে নাকি। বা যে সিদ্ধান্ত নিলেন সেটি আপনার জীবন ধরণের সাথে যায় কিনা। ধরুণ,আপনি যদি আরামপ্রিয় মানুষ হোন, সে ক্ষেত্রে কোন পরিশ্রমের পেশা বেছে নিলে সেটার সাথে খাপ খাওয়াতে বেশ বেগ পেতে হবে। আবার, যে কারোর সাথে সিদ্ধান্তটা নিয়ে কি ভাবছেন তা নিয়ে কথা বলা। খুব জানে এমন মানুষের সাথে কথা বলা লাগবে এমনটা নয়, কারণ দেখা গেছে চিন্তাগুলা কথার মাধ্যমে অনেক কিছুই স্পষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু একজন জ্ঞান সম্পন্ন মানুষেরে সাথে কথা বললে সঠিক দিক নির্দেশনা পাওয়া যায়। আপনি যে সিদ্ধান্তটা নিতে চাচ্ছেন সেটা যারা নিয়েছে, তাদের সাথে কথা বলেও সহজে সিদ্ধান্ত নেয়া যায়। তখন একজন বুঝতে পারবে, সে যে সিদ্ধান্তগুলো ভাবছে সেটি আসলেও প্রয়োগ করা যাবে কিনা এবং সিদ্ধান্তটা নিলে কী হবে। যেমন, একজন মেডিকেলের ছাত্রই আপনাকে বলতে পারবে মেডিকেলে পড়লে আপনার জীবনের পথ কেমন হবে এবং সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন আপনি সেই পথে আগাতে চান কিনা। প্রয়োজনে, একজন কাউন্সিলরের সাহায্য নেয়া যেতে পারে।
আমরা প্রতিদিন অনেক ছোট-বড় সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকি এবং মাঝে মাঝে সিদ্ধান্তহীনতায় থাকা অস্বাভাবিক কিছু না। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে, সিদ্ধান্তহীনতার জন্য যাতে অন্যান্য কাজ বাধাপ্রাপ্ত না হয়।
(নুজহাত জাহানারা)