রাইসা ইউনিভার্সিটির শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী। তার বাসা ইউনিভার্সিটি থেকে বেশ দূরে। রাইসার প্রতিটা দিন শুরু হয় ভোরবেলা। ইউনিভার্সিটির সকাল আটটা থেকে বিকেল পর্যন্ত ক্লাস করে, তারপর টিউশন করানো শেষে ঢাকা শহরের জ্যাম ঠেলে বাসায় আসতে আসতে রাইসার প্রতিদিনই অনেক দেরি হয়ে যায়। ক্লান্ত শরীরে রাইসার আর কোন কাজ করতেই ইচ্ছা করে না। এভাবে প্রতিদিনকার ব্যস্ততার মাঝে রাইসার প্রায়ই মনে হয় তার সারাদিন প্রচুর কাজ করার পরেও কোন কাজই ঠিকমতো হচ্ছে না। এই কারণে সে ইদানিং বেশ অস্বস্তি বোধ করছে আর কাজের প্রতি সঠিকভাবে মনোযোগ দিতে পারছেনা।
প্রতিদিনের ব্যস্ত জীবনে রাইসার মত আমাদের অনেকের মনে হয় সময় কোথা দিয়ে পার হয়ে গেল টেরই পাওয়া গেল না। অত্যন্ত ব্যস্ততার কারণে আমরা না আপনজনদের সময় দিতে পারি না পারি নিজেকে সময় দিতে। অনেক সময় আবার শখের বা বিনোদনমূলক কাজগুলোকে কেউ কেউ সময় নষ্ট বলেও মনে করে। কিন্তু আসলেই কি তাই? নিজেকে সময় দেয়া বা self care মোটেও সময় নষ্ট করা নয়। বরং এটা মানুষের মন ভালো রাখতে ও কাজে মনোযোগী হতে সাহায্য করে। নিজের যত্ন নেওয়ার বিষয়টিকে প্রায় মানুষই যথাযথ গুরুত্ব দেয়না। অথচ নিজের প্রতি আমাদের এই সামান্য মনোযোগ আমাদের আমাদের স্ট্রেস লেভেল কমিয়ে কর্মক্ষমতা বাড়াতে আর কাজে উৎফুল্ল থাকতে সাহায্য করতে পারে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, বিনোদনমূলক কাজ বা recreational activities মানুষের স্ট্রেস, anxiety বা উদ্বিগ্নতা, ডিপ্রেশন কমাতে এবং আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করে। এটা মানুষের মধ্যে ইতিবাচক চিন্তাধারার বিকাশ ঘটাতেও সহায়তা করে। বিভিন্ন মানুষের self care এর ধরন বিভিন্ন রকমের হতে পারে। এর কোন ধরা বাঁধা নিয়ম নেই। যেমন অনেক মানুষই ছুটি পেলেই শহর থেকে দূরে প্রকৃতিকে কাছ থেকে দেখতে পাহাড় বা সমুদ্র দেখতে ছুটে যান। ভ্রমণ মানুষের মাঝে অনন্য প্রাণশক্তি আর পজিটিভ এনার্জির সঞ্চার করে যা মানুষকে উদ্যোমী করে তোলে। আবার অনেকে ভ্রমনের চেয়ে বেশি বই পড়ে উজ্জীবিত হয়। সেক্ষেত্রে শত ব্যস্ততার মাঝে কিছুটা সময় বই পড়লে তার সময় নষ্ট হয়না বরং তা পরবর্তীতে তার কাজের প্রতি মনোযোগী হতে সাহায্য করে। প্রত্যেক মানুষেরই আলাদা পছন্দ থাকতে পারে এবং সে অনুযায়ী self care এর ধরন ভিন্ন ভিন্ন হয়। দিনের কিছুটা সময় পছন্দের কাজে ব্যয় করা মানুষের মন ভালো রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
শখের বা পছন্দের কাজ করার সময় প্রায়শই সময় কখন পার হয়ে যায় টের পাওয়া যায় না। এক্ষেত্রে নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ আর কাজের প্রায়োরিটির কথা মাথায় রাখাটা জরুরি। অনেক স্ট্রেসপূর্ণ কোন সপ্তাহের শেষে নিজের পছন্দের মুভি দেখাটা আনন্দের হলেও পরীক্ষার আগের দিন পরীক্ষার পড়া বাদ দিয়ে পছন্দের মুভি দেখাটা ক্ষতির কারণ হিসেবেই গণ্য হবে।
মানুষের জীবনে কাজ আর বিশ্রামের সমন্বয় থাকাটা খুবই জরুরি। অতিরিক্ত কাজের চাপ যেমন মানুষের জন্য ক্ষতিকর তেমনিভাবে প্রয়োজনীয় কাজ ফেলে রেখে অতিরিক্ত সময় recreation এ ব্যয় করাটাও কাম্য নয়।