প্রফেশনাল সাইকোলজিস্টরা কেউ নিজেদের পরিচয় দেন ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট হিসেবে, আবার কেউ পরিচয় দেন কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট হিসেবে। এদের মধ্যে পার্থক্য কী? মানসিক স্বাস্থ্যসেবার জন্য কার কাছেই বা যাবেন?
প্রথমে বলে নেয়া উচিত দুটিই গুরুত্বপূর্ণ। ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট হতে যেমন এম. ফিল ডিগ্রি নেয়া আবশ্যক, কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট হতে গেলেও তা আবশ্যক।
পার্থক্য বোঝার সুবিধার্থে শব্দদুটির মূলের দিকে তাকানো যাক। ক্লিনিক্যাল শব্দটির উৎপত্তি গ্রিক ক্লাইন শব্দ থেকে, যার অর্থ হচ্ছে বিছানা। অর্থাৎ ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্টদের কাজ হচ্ছে শয্যাশায়ী, আরো সঠিকভাবে বলতে গেলে গুরুতর অসুস্থদের চিকিৎসা করা।
স্কিৎজোফ্রেনিয়া, ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেশন জাতীয় রোগ যেগুলো মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপনকে একেবারে থামিয়ে দেয়, এগুলোই হচ্ছে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্টদের ক্ষেত্র। বিভিন্ন মানসিক রোগের চিহ্নিতকরণ, চিকিৎসা, গবেষণা সংক্রান্ত কাজ করেন ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্টরা। এজন্য ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্টদের পাওয়া যায় বিভিন্ন মেন্টাল ইনস্টিটিউটে।
অন্যদিকে কাউন্সেলিং শব্দটি এসেছে ল্যাটিন কনসুলেয়ার হতে, যার অর্থ পরামর্শ দেয়া (উল্লেখ্য, কনসাল্ট শব্দটির উৎপত্তিও এখান থেকে)। ঐতিহাসিকভাবে, কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্টদের কাজ ছিল মানুষকে জীবনের নানা ক্ষেত্রে পরামর্শ দেয়া। স্ট্রেস, সামাজিক সম্পর্ক, সিদ্ধান্ত নিতে জটিলতা এসব ক্ষেত্রে সাহায্য দিয়ে থাকেন কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্টরা। অর্থাৎ এই সেবা গ্রহণকারীরা নেসেসারিলি অসুস্থ নন। কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্টরা কাজ করেন মানসিক রোগ প্রতিরোধে। মোটা দাগে তাঁদের কাজ হচ্ছে একটি সুস্থ জনগোষ্ঠীকে সাহায্য করা। এ কারণে উন্নত বিশ্বে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস প্রভৃতি জায়গায় কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্টদের নিয়োগ দেয়া হয়ে থাকে। বাংলাদেশেও এর প্র্যাকটিস শিগগিরই শুরু হতে যাচ্ছে।
তবে কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্টদের সাধারণ কাউন্সেলরদের সাথে গুলিয়ে ফেললে চলবে না। একজন কাউন্সেলর শুধুই কাউন্সেল দেন। কাউন্সেলর হতে খুব বেশি কিছুর প্রয়োজন হয় না। মানুষের কথা শোনার ক্ষমতা থাকতে হয় এবং সেই সাথে সামান্য প্রশিক্ষণ নিয়ে নিলেই যথেষ্ট। আর কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্টরা হচ্ছেন বিশেষজ্ঞ। তাঁদের কাজের পরিধি ব্যাপক।
বর্তমানে ক্লিনিক্যাল ও কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্টদের কাজে ওভারল্যাপিং হয় প্রচুর। কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্টরাও রোগ শনাক্ত করেন, সাইকোথেরাপি দিয়ে থাকেন। মানসিক রোগ সংক্রান্ত গবেষণায় ভূমিকা রাখেন। আবার ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্টরাও রোগীদের কাউন্সেল দেন। এ কারণে আজকাল অনেকে প্রস্তাব করছেন এ দুটি বিষয়ের পার্থক্য তুলে দিতে।
ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট ও কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট উভয়েই গুরুত্বপূর্ণ, উভয়েই এম. ফিল ধারী। কখন কার কাছে যেতে হবে সেটি নির্ভর করে মানসিক সমস্যার প্রকটতার ওপর। আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যকে ঠিক রাখতে অথবা শুধু পরামর্শ নিতে হলেও সাইকোলজিস্টদের কাছে যাওয়ার প্রচলন বাড়ানো উচিত।
লেখা: যারিন আনজুম কথা।