স্ট্রেস থেকে মুক্তি

Share

গত আর্টিকেলে আমরা জেনেছিলাম স্ট্রেস সম্পর্কে। স্ট্রেস হচ্ছে মানুষের অভ্যন্তরীণ এমন একটি ক্ষতিকারক অবস্থা যা কিনা শারীরিক চাহিদা কিংবা আশেপাশের পরিবেশ এবং সামাজিক পরিস্থিতির কারণে সৃষ্টি হয়ে থাকে। ব্যক্তি যদি স্ট্রেসের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে তবে সেটি ব্যক্তির শারীরিক এবং মানসিক উভয় ক্ষেত্রের জন্যই ক্ষতিকারক হিসেবে নিজেকে প্রকাশ করে। স্ট্রেস কে নিয়ন্ত্রণ করে কিংবা স্ট্রেসকে মানিয়ে চলার মাধ্যমে আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অনেকটাই চাপমুক্ত থাকতে পারি। প্রতিটি মানুষই ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে প্রতিনিয়ত স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। সাধারণত স্ট্রেসকে মানিয়ে চলার বিভিন্ন পদ্ধতিকেই আমরা স্ট্রেস কোপিং স্ট্র্যাটেজি বলে জানি।
স্ট্রেস বা দৈনন্দিন জীবনের চাপ মানিয়ে চলার বিভিন্ন উপায় রয়েছে যেমন: স্ট্রেসযুক্ত ঘটনাটির মুখোমুখি হওয়া, চাপযুক্ত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সমাধানের দায়িত্ব গ্রহণ করা, স্ট্রেসযুক্ত ঘটনা বা পরিস্থিতি কে এড়িয়ে চলা, সমস্যা সমাধানের কৌশল সম্পর্কে ভাবা এবং একই সাথে ইতিবাচক মনোভাবসম্পন্ন চিন্তা করা।


o ব্যক্তি স্ট্রেসযুক্ত অবস্থা থেকে দূরে না সরে যেয়ে ঘটনাটির মুখোমুখি হয় এবং সেটিকে এড়িয়ে না গিয়ে বরং আত্মনিয়ন্ত্রণ এর মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করে। স্ট্রেসযুক্ত সমস্যাটির সমাধান যখন ব্যক্তির একার পক্ষে করা সম্ভব না হয় কিংবা সামাজিক ভাবে একটি ভালো সমাধানের সম্ভাবনা থাকে তখন ব্যক্তি তার আশেপাশের মানুষের সাহায্য চায়। সামাজিক জীব হিসেবে ব্যক্তি স্বভাবতই সামাজিক সমর্থন আশা করে থাকে। স্ট্রেসযুক্ত অবস্থায় সামাজিক সমর্থন ব্যক্তিকে নিজের উপর থেকে স্ট্রেসের প্রভাব কমাতে সাহায্য করে। আশেপাশের মানুষের এক্ষেত্রে সহায়তা, পরামর্শ বা নৈতিক সমর্থন প্রদান করতে পারে যা ব্যক্তিকে স্ট্রেসফুল সিচুয়েশন থেকে মুক্তি পেতে সহায়তা করে।
o ব্যক্তি অনেকসময় নিজেই স্ট্রেসযুক্ত অবস্থার সমাধানে এগিয়ে আসে এবং নিজেই তা সমাধানের দায়িত্ব গ্রহণ করে।
o অনেকেই রয়েছেন যারা স্ট্রেসযুক্ত অবস্থা থেকে অনেকটা পালিয়ে বাঁচতে চান। তাদের মধ্যে অনেকের মনে এই ধারণা জন্মায় যে স্ট্রেস উৎপন্ন করে এমন কাজকর্ম কিংবা চিন্তা-ভাবনা থেকে দূরে থাকলে স্ট্রেস কম অনুভূত হবে। বর্তমানে তরুণ সমাজের মধ্যে “আরে ভাবিস না এটা নিয়ে, প্যারা নাই! chill!” অনেকটাই অ্যাভয়ডার ( avoider) কোপিং স্ট্র্যাটেজির দিকে ইঙ্গিত দিয়ে থাকে।
o স্ট্রেসফুল সিচুয়েশনে ঘাবড়ে না যেয়ে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ এবং সমস্যা সমাধানের কৌশল সম্পর্কে ভাবা এবং সে অনুসারে কাজ করার মাধ্যমে মানুষের সৃজনশীলতা এবং ধৈর্যশক্তি প্রকাশ পায়।
এছাড়া বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মনোবিজ্ঞানী এবং চিকিৎসকেরা ভিন্ন ভিন্ন কিছু কৌশলের কথা উল্লেখ করেছেন যা কিনা ব্যক্তিকে স্ট্রেস থেকে দূরে রাখা কিংবা স্ট্রেসফুল সিচুয়েশনে মানিয়ে চলার ক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। সেগুলো হলো-
হালকা ব্যায়াম: প্রতিদিন হালকা ব্যায়াম যেমন হাঁটাচলা, জগিং, ইয়োগা, সাঁতার কাটা, সাইকেল চালানো, টেনিসের মতো ভাল শারীরিক অনুশীলন কার্যকরী।
রিলাক্সেশন: কেউ কেউ খুব সহজ এবং হালকা মেডিটেশনের সাহায্য নেন যেমন শান্ত পরিবেশে বই পড়া কিংবা হালকা সুরে সঙ্গীত শোনা। কেউ কেউ প্রফেশনাল গাইডের সাহায্য নিয়ে থাকেন যাদের দিক নির্দেশনার মাধ্যমে তারা মেডিটেশন করে থাকেন। শারীরিক ও মানসিকভাবে স্ট্রেস কাটানোর জন্য মেডিটেশন খুবই কার্যকর বলে বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত।
আত্ম-নিয়ন্ত্রণ: পূর্বের ঘটনা এবং তার ফলাফল থেকে শিক্ষা নিয়ে ব্যক্তি তার আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। স্ট্রেস কমাতে তাদের নিজস্ব আচরণ যথাযথভাবে পরিবর্তনের পাশাপাশি, লোকেরা তাদের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে আরও সচেতন হতে পারে যাতে কিনা তারা স্ট্রেসফুল সিচুয়েশনে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রেখে সমস্যা সমাধান করতে পারে।। ব্যক্তি কখনো কখনো কিছু বিশেষ মানুষ বা বিশেষ পরিস্থিতি এড়িয়ে চলতে পারে যা কিনা ব্যক্তিকে স্ট্রেসফুল সিচুয়েশনে ফেলে দেয়।
শেয়ারিং: স্ট্রেস উৎপন্ন করছে এমন বিষয়গুলোকে নিয়ে ব্যক্তি কথা বলতে পারেন। এক্ষেত্রে ব্যক্তির পরিবার, বন্ধুবান্ধব্দের এগিয়ে আসাটা ভালো কাজে দেয়। ব্যক্তি যখন তার স্ট্রেসের বিষয়টি অন্য কারো সাথে শেয়ার করে তখন তার উপর থেকে চাপ অনেকখানি কমে যায়। এছাড়া অনেকে প্রফেশনাল সাহায্যও নিয়ে থাকেন।
টাইম ম্যানেজমেন্ট: আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা সময়ের কাজ সময়ে না করে সেটিকে ফেলে রাখেন। এভাবে একের পর এক কাজ জমতে থাকে। হয়ত একসময় দেখা যায় শেষ সময়ে এসে আমরা নিজেদেরকে কাজের স্তুপের মাঝে খুঁজে পাই। বিশাল এই কাজের চাপে আমরা বেশ স্ট্রেসড আউট হয়ে যাই এবং এতে কাজগুলোও সঠিকভাবে সম্পন্ন হয় না। উদাহরণস্বরূপ ধরা যায় একজন ছাত্র যে কিনা পরীক্ষার আগের রাতে সারা বছরের পড়া একসাথে পড়বার চেষ্টা করে। এসব ক্ষেত্রে সঠিক টাইম ম্যানেজমেন্ট আমাদের স্ট্রেসের হাত থেকে মুক্তি দিতে পারে। বিজ্ঞানীদের মতে স্ট্রেস বাকেট থিওরি টাইম ম্যানেজমেন্ট এবং স্ট্রেসের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ককে সবচেয়ে ভালোভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারে। স্ট্রেস বাকেট থিওরিতে ব্যক্তিকে একটি বালতির সাথে তুলনা করা হয় এবং ট্যাপ থেকে পড়তে থাকে পানি দ্বারা কাজ বুঝানো হয়। আমরা যদি সময়ের কাজ সময়ে না করি তবে আস্তে আস্তে বালতিটি ভর্তি হতে থাকে এবং একসময় পানির উচ্চতা বাড়তে বাড়তে বালতি থেকে পানি উপচিয়ে পড়তে শুরু করে যাকে কিনা কাজের চাপে স্ট্রেসড আউট একজন মানুষের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। এবার যদি অন্য একটি বালতিতে একে একে কয়েকটি ছিদ্র করে দেয়া হয় তখন সেই বালতির ছিদ্রগুলো দিয়ে পানি বেরিয়ে যেতে পারে। এতে বালতিটিও আর পানি দ্বারা সম্পূর্ণ ভর্তি হয়ে যায়না এবং পানির উচ্চতাও বেশি বাড়তে পারেনা। এখানে প্রতিটি ছিদ্র করে দেয়া দ্বারা সময়মত কাজ করাকে বুঝানো হচ্ছে। অর্থাৎ যদি আমরা সময়ের কাজ সময়ে করি তবে আমাদের রূপক বালতিটিও পানি দ্বারা ভর্তি হয়না এবং আমরাও কাজের চাপে স্ট্রেসড আউট না হয়ে নিজেদের কাজগুলো সঠিকভাবে শেষ করতে পারি।
এগুলোর পাশাপাশি সাইকোথেরাপি ( কগনিটিভ থেরাপি, ইমোটিভ থেরাপি এবং স্ট্রেস-ইনোকুলেশন ট্রেনিং) দক্ষতা প্রশিক্ষণ, পরিবেশগত পরিবর্তন, শারীরিক পরিবর্তন (রক্তচাপ, মাথাব্যথার মতো শারীরিক লক্ষণ) নিয়ন্ত্রণ, ফ্যামিলি থেরাপি , গ্রুপ থেরাপি ইত্যাদিও স্ট্রেস মোকাবেলায় ব্যবহার করতে দেখা যায়।

প্রেসার কুকার

Share

“অনেক প্রেসারে আছি ভাই” লাইনটি আমরা প্রায়ই ব্যবহার করে থাকি। হোক সেটি কাজের প্রেসার কিংবা পরীক্ষার প্রেসার; আমরা মূলত আমাদের চারপাশের বিভিন্ন ঘটনাবলীর সম্মুখীন হয়ে স্ট্রেস বা চাপ অনুভব করে থাকি। স্ট্রেস শব্দটি আমাদের অতি পরিচিত। প্রতিটি মানুষই কোনো না কোনো সময় স্ট্রেসের সম্মুখীন হয়ে থাকেন। স্ট্রেস হচ্ছে মানবদেহের অভ্যন্তরীণ একটি অবস্থা যা কিনা শারীরিক চাহিদা কিংবা আশেপাশের পরিবেশ এবং সামাজিক পরিস্থিতির কারণে সৃষ্টি হয়ে থাকে। ব্যক্তি যদি স্ট্রেসের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন তবে সেটি ব্যক্তির শারীরিক এবং মানসিক উভয়ক্ষেত্রের জন্যই ক্ষতিকারক হিসেবে নিজেকে প্রকাশ করে।

আমাদের প্রতিদিনের কাজকর্ম কিংবা আশেপাশের পরিবেশের সাথে আমরা মানিয়ে চলার চেষ্টা করি। যখন আমরা কোনো একটি সিচুয়েশনের সাথে সম্পূর্ণভাবে নিজেদের মানিয়ে নিতে ব্যর্থ হই তখনই আমরা স্ট্রেস অনুভব করে থাকি। স্ট্রেস উৎপাদনকারী ঘটনাসমূহকে স্ট্রেসর হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়। মানুষের জীবনের প্রতিটি ছোট কিংবা বড় ঘটনাই স্ট্রেসর হিসেবে কাজ করতে পারে। যেমন কোনো দুর্ঘটনা কিংবা রোগব্যাধি,  প্রাকৃতিক দূর্যোগ, জীবনের বিশেষ কোনো পরিবর্তন, উচ্চমাত্রার শব্দ, স্কুল-কলেজ কিংবা অফিসের কাজকর্মের চাপ যেকোনো কিছুই আমাদের স্ট্রেস অনুভব করার জন্য দায়ী।

স্ট্রেসকে মূলত দুইভাগে ভাগ করা হয়; Eustress (ইউস্ট্রেস) বা পজেটিভ স্ট্রেস এবং Distress (ডিস্ট্রেস) বা নেগেটিভ স্ট্রেস।  এই পজেটিভ স্ট্রেস আমাদের জীবনে মোটিভেটর হিসেবে কাজ করতে পারে এবং নেগেটিভ স্ট্রেস হতাশাজনক পরিস্থিতির দিকে ইঙ্গিত করে। আমরা প্রতিনিয়ত স্ট্রেস জিনিসটিকে নেগেটিভ ভাবেই দেখে থাকি। আমাদের মধ্যে এই স্ট্রেস থাকাটাই কিন্তু স্বাভাবিক; কিন্ত খেয়াল রাখতে হবে সেই স্ট্রেসটা যেন পরিমিত পর্যায়ে থাকে। বেশি স্ট্রেসড হলে আমাদের নিত্যদিনের কাজ কর্মে ব্যাঘাত ঘটে। আবার অনেক সময় একদমই স্ট্রেস না থাকাটা আমাদের যেকোনো কাজে ডিমোটিভেট করতে যথেষ্ট। আমরা বলছিনা প্রোডাক্টিভিটি আনতে জোর করে স্ট্রেস আনতে হবে। অনেকেই আছেন যারা স্ট্রেসে থাকলে কাজ ভালো করেন। আবার অনেকে স্ট্রেসড না থাকলেই কাজে ভালো বোধ করেন। বিজ্ঞানীরা এই অপটিমাম স্ট্রেস লেভেল কে একটি গ্রাফের সাহায্যে বোঝানোর চেষ্টা করেন।

এখানে দেখানো হয় স্ট্রেস কিভাবে প্রোডাক্টিভিটি অর্থাৎ উৎপাদনের সাথে জড়িত। স্ট্রেস যত কম থাকে, মোটিভেশন তত কম থাকে, ফলে কাজ অথবা উৎপাদন ক্ষমতা কমে যায়। আবার স্ট্রেস বেশি হলে মোটিভেশন এর বদলে হতাশ মনোভাবের সৃষ্টি হয়ে সমস্ত কাজটিকেই বিগড়ে দেয়। বিজ্ঞানীরা গ্রাফটির মাধ্যমে দেখানোর চেষ্টা করেছেন এই পরিমিত স্ট্রেস অনেকসময় একধরণের ভালো মোটিভেটর হিসেবে কাজ করে এবং ব্যক্তিকে প্রোডাক্টিভিটির দিকে ধাবিত করায়। পরিমিত স্ট্রেস আমাদের মধ্যে ঠিক যতটুকু টেনশন সৃষ্টি করে ঠিক ততটুকুই কাজটি সম্পূর্ণ করার জন্য মোটিভেট করতে থাকে। তখন আমরা কাজটি শুরু করি। সুতরাং বলা যায়, আমাদের জীবনে স্ট্রেস সম্পূর্ণ নেগেটিভ কোনো ফ্যাক্টরও নয়।

স্ট্রেসের সাথে আমরা সবচেয়ে বেশি যে শব্দটি শুনে থাকি তা হচ্ছে কোপিং (coping) বা মানিয়ে চলা। স্ট্রেস কোপিং বলতে আমরা বুঝি সেই সব পদ্ধতি যার ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা স্ট্রেসফুল সিচুয়েশন গুলোকে মোকাবেলা করতে পারি। সাইকোলজিস্টরা দুইটি প্রধান কোপিং টেকনিকের কথা উল্লেখ করেছেন। সেগুলো হলো-

  • ইন্সট্রুমেন্টাল কোপিং- এখানে ব্যক্তি স্ট্রেসর বা স্ট্রেস উৎপন্নকারী সমস্যাটির উপর বেশি নজর দেয় এবং সেটি সমাধান করার উপায় খুঁজতে থাকে। এখানে স্ট্রেস কিছুটা পজেটিভ দিকে মোড় নেয় এবং ব্যক্তিকে অনেক সময় সাহায্য করে সৃজনশীল সমাধান খুঁজে বের করতে।
  • ইমোশনাল কোপিং- এখানে ব্যক্তি সমস্যাটির চাইতে সেই সমস্যা দ্বারা উদ্ভুত চিন্তা এবং অনুভূতির দ্বারা বেশি প্রভাবিত থাকেন। ব্যক্তি তখন সমস্যা সমাধানের বদলে উক্ত অনুভূতি গুলোকে নিয়ে কাজ করেন কিংবা সম্পূর্ণ ভাবে এড়িয়ে যান। অনেকে এটিকে নেগেটিভ স্ট্রেসের কাতারে ফেলে থাকেন।

চাপ কমাতে বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করা যেতে পারে। আমাদের স্ট্রেসের কারণ আমরা কারো সাথে শেয়ার করার মাধ্যমে চাপমুক্ত থাকতে পারি। টাইম ম্যানেজমেন্ট করেও চাপমুক্ত থাকা যায় কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় সময়মত কাজ না শুরু করার ফলে আমরা চাপে পড়ে যাই। সময়ের কাজ সময়ে করলে স্ট্রেস থেকে অনেকখানি মুক্ত থাকা যায়। এছাড়া থেরাপিস্টরা সাধারণত রিল্যাক্সেশন এর উপর বেশি জোর দিয়ে থাকেন। ব্রিদিং এক্সারসাইজ, মেডিটেশন, মাইন্ডফুলনেস এর চর্চা করা ও স্ট্রেস থেকে বাঁচতে ভালো কাজে দেয়। এছাড়া সাইকোলজিস্টরা আরো অনেক স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট স্কিলের সাহায্যে ক্লায়েন্টদের সহায়তা করে থাকেন। -আশিক মাহমুদ

প্যারেন্টিং স্টাইল ও সন্তানের ভবিষ্যৎ

Share

‘অমুকের ছেলে পরীক্ষায় ফার্স্ট হতে পারলে তুমি কেন পারবে না?’- আমাদের দেশে এইরকম কথা শুনেনি এইরকম ছেলেমেয়ে পাওয়া ভার। অনেক ছেলেমেয়ে ছোটবেলা থেকেই এই কারণে হীনমন্যতায় ভোগে। বাবা মা আমাদের সবচেয়ে বড় শুভাকাঙ্ক্ষী- এই বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু সন্তানের ভালো হবে চিন্তা করে বাবা মায়েরা যা কিছু করেন তার সবই কি ঠিক?

শুধু খাদ্য, পোশাক, ভালো স্কুলে ভর্তি করানো ইত্যাদি মৌলিক চাহিদা পূরণ করা পর্যন্তই অভিভাবকের দায়িত্ব সীমাবদ্ধ না।সন্তানের মনস্তত্ব সঠিকভাবে বুঝা ও তার মানসিক বিকাশের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করাও অভিভাবকের গুরুদায়িত্ব। এই প্যারেন্টিং স্টাইলের উপর সন্তানের ভবিষ্যৎ আচরণ অনেকখানি নির্ভর করে।

যেসব পিতামাতা তাদের সন্তানদের যথেষ্ঠ সময় দেন না তাদের সন্তানদের আচরণে পরবর্তীতে aggressiveness আর insecurity লক্ষণীয়। আবার সন্তানের প্রতি অতিরিক্ত সংবেদনশীল (over protective) বাবা মায়েদের কারণে সন্তানরা অতিরিক্ত নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। অনেক পিতামাতাই সন্তানের ন্যায় অন্যায় সকল আবদার পূরণ করে থাকেন। সন্তানের আবদার পূরণ করাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু অনেক সময়ই দেখা যায় সন্তান আরেকজনের খেলনা তার অনুমতি ছাড়াই ব্যবহারের অন্যায় জেদ করে থাকে। আর পিতামাতা তাদের এই আবদার রক্ষাও করে থাকেন। এতে করে শিশুরা অন্যের খেলনা কেড়ে নিতে শিখে। পরবর্তীতে তারা আক্রমণাত্নক, অন্যের ইচ্ছা বা আবেগের প্রতি অসহিষ্ঞু এবং অবাধ্য হয়ে উঠে।

সমাজ মনোবিজ্ঞানীরা শিশুর সামাজিকীকরণে প্যারেন্টিং স্টাইলের প্রভাব নিয়ে প্রচুর গবেষণা করেছেন। মনোবিজ্ঞানীরা মূলত তিন ধরণের প্যারেন্টিং স্টাইল চিহ্নিত করেছেন।

১. Authoritarian

২. Permissive

৩. Authoritative

Authoritarian প্যারেন্টিং এ পিতামাতার প্রতি চরম আনুগত্য প্রদর্শন করা হয়। শিশুদের মতামত বা ইচ্ছাকে কম মূল্যায়ন করা হয়। শিশুর আচরণ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য শাস্তির প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়। এতে করে পিতামাতা ও শিশুদের সম্পর্ক আন্তরিক ও বন্ধুত্বপূর্ণ হওয়ার বদলে শিশুর মধ্যে ভীতি ও আনুগত্যের সৃষ্টি করে। Authoritarian প্যারেন্টিং শিশুর আত্নবিশ্বাস গঠনে বিরূপ ভূমিকা পালন করে। পরবর্তী জীবনে ব্যক্তির আচরণে রাগ, বিতৃষ্ঞা, ক্ষোভ, ডিপ্রেশন দেখা দিতে পারে।

Permissive পিতামাতা শিশুর উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করেন না বরং শিশুদের নিজেদের অভিব্যক্তি প্রকাশের সুযোগ সৃষ্টি করেন। শিশুদের শাস্তির ভয় দেখিয়ে নিয়ম শৃঙ্খলা বা আদব কায়দা শেখানোর পরিবর্তে এর পেছনের যৌক্তিক কারণগুলো বুঝিয়ে নিয়ম কানুন মেনে চলতে উৎসাহিত করেন। যেমন, কোন শিশু জোর করে অন্যের খেলনা নেওয়ার আবদার করলে পিতামাতা যদি ছোট বয়সেই তাদের বুঝিয়ে বলেন যে অন্যের জিনিস তার অনুমতি ব্যতীত ব্যবহার করা উচিত না- তাহলে তারা তাদের আচরণে পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবে। পরবর্তীতে তারা অন্যের ইচ্ছা অনিচ্ছার প্রতিও শ্রদ্ধাশীল হবে।

মনোবিজ্ঞানীরা authoritative প্যারেন্টিং স্টাইলকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। Authoritative পিতামাতা যেমন শিশুর নিজস্ব ব্যক্তিত্বকে গুরুত্ব দেন তেমনিভাবে তারা সামাজিক মূল্যবোধ শিখানোর প্রতিও যত্নশীল। Authoritative প্যারেন্টিং এ ব্যক্তির সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্বাধীনতা, মতামত, ব্যক্তিত্বকে গুরুত্ব সহকারে মূল্যায়ন করা হয়। শিশুদের আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলা, সামাজিকীকরণ, সফল ব্যক্তিত্ব গঠনে authoritative প্যারেন্টিং সবচেয়ে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।গবেষণায় দেখা গেছে, authoritative প্যারেন্টিং এ বেড়ে উঠা শিশুর পরবর্তী জীবনে ডিপ্রেশন বা অপরাধ প্রবণতার হার অনেক কম।

প্রতিটি শিশু প্রাথমিক গুরুত্বপূ্র্ণ আচরণ পরিবার তথা পিতামাতা থেকেই  শিখে। তাই একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গড়ে তোলার জন্য সঠিক প্যারেন্টিং এর প্রতি পিতামাতার যত্নবান হওয়া উচিত।  -সামিরা মাহজাবিন

ফ্রাস্ট্রেশনের এপিঠ ওপিঠ

Share

“খুব ফ্রাস্ট্রেশনে আছি” আমাদের প্রতিদিনের জীবনে একটি সাধারণ বিষয় হয়ে উঠেছে এই কথাটি। সাধারণত আমরা কখন ফ্রাস্ট্রেশনে থাকি? কেনোই বা ফ্রাস্ট্রেশন ঘিরে ধরে আমাদের? এই নিয়েই আজকের লেখা।

ফ্রাস্ট্রেশন কখন হয়?

সাধারণত আমরা যখন আমাদের কোনো একটি লক্ষ্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হই কিংবা কোনো একটি কাজ করার সময় বাধার মুখে পড়ি তখন আমরা ফ্রাস্টেশনের সম্মুখীন হই। প্রতিদিনের ঘটনাবহুল জীবনে বিভিন্ন বিষয়ের কারণেই আমরা ফ্রাস্টেশন অনুভব করতে পারি। দীর্ঘ জ্যাম, টিকেট কাউন্টারের লম্বা লাইন, বিকট শব্দে বাজতে থাকা লাউডস্পীকারের ফলে পড়াশোনায় মনোযোগ বসাতে না পারা ইত্যাদি ঘটনার কারণে আমরা প্রায় সময়ই ফ্রাস্ট্রেশন অনুভব করছি। ফ্রাস্ট্রেশনের সাথে প্রাথমিক ভাবে আমরা বিরক্তি এবং রাগ অনুভব করে থাকি। তবে সব ধরণের ফ্রাস্ট্রেশনই যে রাগের সৃষ্টি করবে তা নয়। অনেক ক্ষেত্রে আমরা ফ্রাস্ট্রেশনকে একধরণের সিগন্যাল হিসেবে নিতে পারি যা কিনা আমাদের লক্ষ্যের দিকে আমাদের এগিয়ে যাওয়ার পন্থাকে প্রভাবিত করে। অর্থাৎ কোনো এক উপায়ে কাজ সম্পন্ন না হলে অন্য কোনো উপায়ের আশ্রয় নেয়া। এতে ব্যক্তি তার সৃজনশীলতার চর্চা করতে পারে। ফ্রাস্ট্রেশন স্বয়ংক্রিয় ভাবেই আমাদের জীবনে আসবে এবং প্রভাব বিস্তার করবে। যেহেতু আমরা অর্জন এবং সাফল্যের দিকে নিজেদের জীবনকে পরিচালিত করছি সেহেতু প্রতিটি পদক্ষেপে বাধার সম্মুখীন হওয়া এবং তা থেকে ফ্রাস্ট্রেশনের সৃষ্টি হওয়াটা স্বাভাবিক।

ফ্রাস্ট্রশন কেনো হয়?

আমরা আগেই জেনেছি যে, সাধারণত মানুষ যখন কাজেকর্মে বাধা পায় কিংবা কোনো একটি লক্ষ্য অর্জনে বাধার সম্মুখীণ হয় তখন সে ফ্রাস্ট্রেশন অনুভব করে থাকে। সাইকোলজিস্টরা ফ্রাস্ট্রেশন কেনো হয় এর উত্তর খুঁজতে গিয়ে অভ্যন্তরীন এবং বহিরাগত দুই ধরণের কারণ চিহ্নিত করেছেন। ফ্রাস্ট্রেশনের কারণ হিসেবে কোনো একটি কাজ সম্পন্ন করার জন্য প্রয়োজনীয় আত্মবিশ্বাসের অভাব কে অভ্যন্তরীন কারণ এবং কোনো একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যের সামাজিক অবস্থা কিংবা উক্ত লক্ষ্যের প্রতি সমাজের বিরূপ প্রতিক্রিয়া এবং অন্যান্য বাধা বিপত্তিকে বহিরাগত কারণ হিসেবে দায়ী করে থাকেন। এছাড়া অধিক চিন্তা, ভয়, উদ্বেগ থেকেও ফ্রাস্ট্রেশনের সৃষ্টি হয়ে থাকে।

ফ্রাস্ট্রেশনের রকমফের

ফ্রাস্ট্রেশন মূলত দুই প্রকার। প্রাইমারী ফ্রাস্ট্রেশন এবং সেকেন্ডারি ফ্রাস্ট্রেশন। প্রাইমারী ফ্রাস্ট্রেশন বলতে মূলত বোঝায় যখন কেউ একজন তার কোনো একটি প্রাথমিক প্রয়োজন মেটাতে ব্যর্থ হয়। এক্ষেত্রে ব্যক্তির কাছে প্রয়োজনটির প্রাধান্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ এবং এখানে ব্যর্থতাকেই ব্যক্তি বড় করে দেখেন। যেমন কেউ হয়ত পরের দিন অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে ব্যর্থ হচ্ছে। ব্যক্তির কাছে এই ব্যর্থতাই তখন ফ্রাস্ট্রেশনের কারণ। সেকেন্ডারি ফ্রাস্টেশনে একটি দৃশ্যমান বাহ্যিক কারণের উপর জোর দেয়া হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় উক্ত ব্যক্তি যদি লাউডস্পীকারে উচ্চস্বরে গান বাজানোর কারণে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে ব্যর্থ হন তখন তিনি লাউডস্পীকারের উপস্থিতির কারণে ফ্রাস্ট্রেশন বোধ করেন।

ফ্রাস্ট্রেশনের ফলে সাধারণত মানুষ বিরক্ত বোধ করে থাকে এবং সেটিকে কাটিয়ে উঠতে সে আক্রমণাত্মক হয়ে উঠতে পারে। অনেক সময় দেখা যায় তাদের এই আক্রমণাত্মক ব্যবহারের ফলে তারা তাদের ফ্রাস্ট্রেশনের মূল কারণ চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হয় এবং সেটির সমাধান তখন অনেকটা অসম্ভব হয়ে পড়ে।

ফ্রাস্ট্রেশন থেকে মুক্তি

ফ্রাস্ট্রেশনের সমাধান হিসেবে সাইকোলজিস্টরা সাধারণত ফ্রাস্ট্রেশনের মূল কারণ কিংবা এর উৎপত্তি কে চিহ্নিত করে সে অনুযায়ী কাজ করতে বলে থাকেন। ফ্রাস্টেশনের সময় রাগান্বিত না হয়ে ফ্রাস্ট্রেশনকে একটি স্বাভাবিক বিষয় হিসেবে মেনে নিয়ে শান্ত থাকলে এবং মেডিটেশন বা অন্যান্য উপায়ে নিজেকে “শীঘ্রই ফ্রাস্ট্রেশন কেটে যাবে” এই বিশ্বাস নিয়ে পুনরায় কাজ শুরু করলে ব্যক্তি আবারও স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে পারেন। ফ্রাস্ট্রেশন মানেই থেমে যাওয়া নয়। বরং বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে ফ্রাস্ট্রেশন আমাদের জন্য শাপেবর হয়ে আসতে পারে। ফ্রাস্ট্রেশনের সময় নিজের সক্ষমতার উপর বিশ্বাস রেখে কাজ করলে এবং কাজের প্রতি দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে থাকলে কাজ সম্পন্ন করার বিভিন্ন উপায় সামনে আসতে পারে যা ব্যক্তির ব্যবস্থাপনামূলক দক্ষতা এবং সৃজনশীলতার দিকটিকে ফুটিয়ে তোলে।

আশিক মাহমুদ

মায়ের মনখারাপ

Share

রিনার বাচ্চার বয়স এক মাস হলো। পরিবারে এখনো নবজাতকের আগমনের উৎসব চলছে। সবার আকর্ষণ কেন্দ্র এই বাচ্চা। মা হতে পেরে রিনা খুব খুশি হলেও কিছুদিন হলো তার মেজাজ খিটখিটে। তার কিছুই ভাল লাগে না,সারাদিন মন খারাপ থাকে, প্রায়ই কান্না করে এমনকি বাচ্চার কাজ করতেও বিরক্ত লাগে ইদানিং। রিনা তার আকস্মিক পরিবর্তন বুঝতে পারলেও কিভাবে কার কাছে যাবে বুঝতে পারে না। সাথে তার পরিবারের কেউ তাকে বুঝতে চেষ্টা করে না। হঠাৎ একদিন রিনার বান্ধবী তার বাসায় আসে। রিনার ক্লান্তি মাখা চেহারা দেখে তিনি রিনাকে তার মানসিক অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। সব কথা শোনার পর উনি বুঝতে পারেন রিনা পোস্ট পার্টাম ডিপ্রেশনে ভুগছে।

লক্ষণ:
রিনার অবস্থাকে মনোবিজ্ঞানীদের ভাষায় পোস্ট পার্টাম ডিপ্রেশন বলা হয়। পোস্ট পার্টাম ডিপ্রেশন সন্তান জন্মের ২ বা ৩ সপ্তাহ পর দেখা দেয়। প্রথমে মনখারাপ, মেজাজ খিটখিটে হয় যেটাকে বেবি-ব্লু বলা হয়। কিন্তু এই লক্ষণ গুলো যখন তীব্র হয়ে যায় এবং এর সাথে আরো অনেক লক্ষণ যোগ হয় যেমন উদ্বেগ, হতাশা, নিজের ও আশেপাশের মানুষের উপর রাগ এবং তাদের এড়িয়ে চলা, প্রচন্ড মুড সুইং, প্রায়ই কান্না করা ইত্যাদি।

রিনার অবস্থাকে মনোবিজ্ঞানীদের ভাষায় পোস্ট পার্টাম ডিপ্রেশন বলা হয়। পোস্ট পার্টাম ডিপ্রেশন সন্তান জন্মের ২ বা ৩ সপ্তাহ পর দেখা দেয়। প্রথমে মনখারাপ, মেজাজ খিটখিটে হয় যেটাকে বেবি-ব্লু বলা হয়। কিন্তু এই লক্ষণ গুলো যখন তীব্র হয়ে যায় এবং এর সাথে আরো অনেক লক্ষণ যোগ হয় যেমন উদ্বেগ, হতাশা, নিজের ও আশেপাশের মানুষের উপর রাগ এবং তাদের এড়িয়ে চলা, প্রচন্ড মুড সুইং, প্রায়ই কান্না করা ইত্যাদি।

কারণ:
মা হওয়ার পর শারীরিক, মানসিক ও বিভিন্ন পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে একজন নারীকে যেতে হয়। শরীরের বিভিন্ন ধরণের হরমনের উঠা-নামার ফলে মূলত একজন মা এই অনুভূতির ভিতর দিয়ে যায়। এর সাথে যোগ হয় মায়ের দায়িত্ব পালন, নির্ঘুম রাত ও পরিবারের থেকে এক ধরণের দায়িত্ব পালনের চাপ ও প্রত্যাশা। এগুলো নতুন মায়ের মধ্যে পোস্ট পার্টাম ডিপ্রেশনের সূচনা করে।

প্রতিকার:
প্রথমে পরিবারের সদস্যদের এগিয়ে আসতে হবে। তাদের সাপোর্ট একজন মায়ের জন্য খুবই জরুরী এবং অনেক সময়ই পারিবারিক সাপোর্টের কারণেই একজন মা এই পোস্ট পার্টাম ডিপ্রেশন থেকে কাটিয়ে উঠতে পারে। কিন্তু যে লক্ষণগুলো উপরে বলা হলো তা যদি মাত্রাতিরিক্ত হয়, ২ সপ্তাহ অতিক্রম করে, প্রতিদিনের কাজে বাধা হয়ে দাড়ায় এবং আত্মহত্যার চিন্তা বা চেষ্টা থাকে (খুবই কম ) তাহলে অবশ্যই প্রোফেশনাল হেল্প বা মনোবিজ্ঞানীর শরণাপন্ন হওয়া প্রয়োজন।

এতক্ষণ মায়েদের কথা বললেও বাবারাও এর থেকে মুক্ত নয়। বাবাদের মধ্যেও এই লক্ষণগুলো দেখা যায় কারণ মায়েদের সাথে তাদেরও জীবনে পরিবর্তন আসে।

প্রায় প্রত্যেক মায়েরাই  পোস্ট পার্টাম ডিপ্রেশনের মধ্য দিয়ে যায় যেটি অস্বাভাবিক কিছু নয়। পারিবারিক সহযোগিতাই পারে মায়ের মন ও স্বাস্থ্য ভাল রাখতে। তাই পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতামূলক আচরণ করা উচিত। 

ভালো রাখি মায়েদের।

নুজহাত জাহানারা

মনঋতুর আদ্যোপান্ত

Share

গত লেখায় আমরা জেনেছিলাম ইউনিপোলার ডিপ্রেশন সম্পর্কে। এই ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত ব্যক্তি প্রায় সময়ই শুধুমাত্র ডিপ্রেসনে ভুগে থাকেন। কিন্তু যদি আক্রান্ত ব্যক্তিটি কখনো অত্যন্ত ডিপ্রেশন আবার কখনো অত্যন্ত আনন্দিত অবস্থায় থাকে তখন আমরা সেটাকে কি বলতে পারি? মনোবিজ্ঞানীরা ব্যক্তির এই মানসিক অবস্থার নাম দিয়েছিলেন “ম্যানিয়াক ডিপ্রেশন”; পরে এটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় “বাইপোলার ডিসঅর্ডার”।

বাইপোলার ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত কারা?

বাইপোলার ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত ব্যাক্তি উপর্যুপরি প্রচন্ড রকমের মুড সুইং এর শিকার হন। কখনো অত্যন্ত ডিপ্রেসড থাকেন; এতটাই ডিপ্রেসড থাকেন যে ব্যক্তি আত্মহননের সিদ্ধান্তও গ্রহণ করতে পারেন আবার কখনো একজন ম্যানিয়াকের মত আচরণ করেন (ম্যানিয়া হচ্ছে ডিপ্রেশনের ঠিক উল্টো একটি অবস্থার নাম। এই পর্যায়ে ব্যক্তি অত্যন্ত উৎফুল্ল বোধ করেন)। ব্যক্তি তার এই ডিপ্রেশন কিংবা ম্যানিয়া ফেজটিতে সপ্তাহ কিংবা কখনো মাসব্যাপী অবস্থান করেন। মূলত ব্যক্তি এই দুই ধরণের অবস্থার মধ্যে প্রতিনিয়ত বসবাস করতে শুরু করেন বলেই একে বাইপোলার নামে অভিহিত করা হয়েছে। মনোবিজ্ঞানী ওয়াইনরেবের ভাষায় বাইপোলার ডিসঅর্ডার মূলত আমাদের মস্তিষ্কের একটি সমস্যা যা কিনা আমাদের মানসিক অবস্থার ওঠানামা করার জন্য দায়ী। এই ওঠানামা এতটাই প্রকট হয় যে, এটি আমাদের দৈনন্দিন কাজকর্মে যথেষ্ঠ ব্যাঘাত ঘটাতে সক্ষম। মানসিক সমস্যার তীব্রতার উপর ভিত্তি করে বাইপোলার ডিসঅর্ডারকে দুইটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়। ১) বাইপোলার ১ ডিসঅর্ডারঃ এখানে ব্যক্তি কমপক্ষে একবার ম্যানিয়া এবং তার আগে ডিপ্রেশন ফেজের মুখোমুখি হন। ২) বাইপোলার ২ ডিসঅর্ডারঃ এখানে ব্যক্তি একাধিকবার ডিপ্রেশনের শিকার হন এবং কমপক্ষে একবার হাইপো ম্যানিয়া ফেজে অবস্থান করেন। হাইপো ম্যানিয়াক ব্যক্তির ঘুম কম হয় এবং অত্যন্ত চঞ্চল প্রকৃতির হয়ে থাকেন। এছাড়া উৎফুল্লতা এবং প্রতিযোগী মনোভাব পোষণ করেন। তিনি প্রায়ই মিশ্র রকমের অনুভূতি অনুভব করেন। দুই ধরণের ক্যাটাগরিতেই ব্যক্তি প্রচন্ড রকমের মুড সুইং এর মধ্য দিয়ে যান।

বাইপোলার ডিসঅর্ডারের লক্ষণগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়।
১) ম্যানিয়াক সিম্পটম-

  • অদ্ভুত বোধ করা।
  • উদাস কিংবা একঘেয়েমিতা।
  • বিভ্রান্ত বোধ করা।
  • উৎফুল্ল ব্যক্তির মনে হয় যে তারা যে কোনো কিছুই করতে পারেন এবং এই চিন্তা থেকে তারা বিপদজনক কাজ করে বসতে পারেন।
  • ব্যক্তির আচরণে হঠাৎ করে চিন্তার উদয় হওয়া আবার হঠাৎ ই সেটি মিলিয়ে যেয়ে নতুন কোনো চিন্তার উদয় হওয়া।
  • চঞ্চলতা কিংবা কখনো আক্রমনাত্মক ব্যবহার দেখা দেয়।

২) ডিপ্রেশন সিম্পটম

  • হতাশা
  • নিজেকে দোষী এবং ব্যর্থ মনে করা
  • উদ্বিগ্নতা
  • ঘুমের ব্যাঘাত
  • দুঃখী মনোভাব
  • বিরক্তিবোধ, ইত্যাদি।

ম্যানিয়াক ব্যাক্তি কখনো নিজেকে অত্যন্ত সফল এবং সুখী ভাবেন আবার হঠাৎই ডিপ্রেশন ফেজে হতাশায় নিমজ্জিত হন। কমপক্ষে সাত দিন থেকে বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে দুইধরণের লক্ষণই বারবার দেখা গেলে ব্যাক্তি বাইপোলার ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত বলে ধরে নেয়া যায়।

কি কারণে বাইপোলার ডিসঅর্ডার হতে পারে?

বাইপোলার ডিসঅর্ডারের কারণ হিসেবে মূলত বিজ্ঞানীরা আমাদের মস্তিষ্কের অস্বাভাবিক কার্যক্রমকে চিহ্নিত করেছেন। নোরেনেফ্রিন হরমোনের অধিক ক্ষরণের ফলে ম্যানিয়া এবং স্বল্প সেরোটোনিন ক্ষরণের ফলে ডিপ্রেশন ফেজের উৎপত্তি হয়। কিছু গবেষক নিউরন মেমব্রেনের ভেতরে এবং বাইরে আয়নের অস্বাভাবিক চলাচল এবং জেনেটিক এ্যাবনর্মালিটিকে বাইপোলার ডিসঅর্ডারের জন্য দায়ী করছেন।

তবে সুখের বিষয় হচ্ছে বাইপোলার ডিসঅর্ডার দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা হলেও এটি সমাধানযোগ্য। বাইপোলার ডিসঅর্ডার ট্রিটমেন্টের প্রধান লক্ষ্য থাকে ম্যানিয়াক এবং ডিপ্রেশন ফেজের পুনরাবৃত্তির হার কমানো। সাইকিয়াট্রিস্ট রোগীর অবস্থা অনুযায়ী তাকে এ্যান্টিসাইকোটিস মেডিসিন কিংবা কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপী কিংবা ইলেক্ট্রো কনভালসিভ থেরাপীর আওতায় আনেন। সঠিক সেবার মাধ্যমে ৩ থেকে ৪ মাসের মধ্যে রোগীর অবস্থার উন্নতি দেখা যায়।

বাইপোলার ডিসঅর্ডার সহ অন্যান্য মানসিক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা সাধারণত তাদের অসুস্থতা প্রকাশের আশঙ্কায় থাকেন কারণ তারা মনে করেন যে তারা সমাজের দ্বারা প্রত্যাখাত হতে পারেন কিংবা পাগল বলে অভিহিত হতে পারেন। এই ভয়টি আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিত্সা গ্রহণ থেকে বিরত করতে পারে যা তাদের পরিস্থিতি আরও খারাপ করে দেয়। লিন্ডন (২০১১) এর মতে, দুই ধরণের ভয় কাজ করে; সাধারণ মানুষের বাইপোলার ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত রোগীর প্রতি ভয় এবং রোগীর নিজের ভয়। রোগীর নিজের ভয় থাকে মূলত নিজেকে নিয়ে উৎপন্ন হতাশা এবং স্বল্প আত্মমর্যাদা।  যে ব্যক্তি উভয় ধরণের ভয়ে  ভুগছেন তিনি নিঃসন্দেহে মানসিক সাহায্য এবং প্রিয়জনের সমর্থন না পেলে এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে পারবেন না। বাইপোলার ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রতি আমাদের আরো বেশি সহানুভূতিশীল হতে হবে।

-আশিক মাহমুদ

বিষন্নতা বৃত্তান্ত

Share

খুব হাসিখুশি প্রাণবন্ত রাজীবের জীবন যেন হঠাৎ করেই থমকে গেছে। এক অদ্ভুত শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে তার মনে। সকালে ঘুম থেকে উঠলেও  রাজীব ঘন্টার পর ঘন্টা বিছানায় পড়ে থাকে। নানা অজুহাত‌ দেখিয়ে সে কয়েকদিন অফিসে যায়নি। তার খুব জরুরি প্রেজেন্টেশন ছিল আজকে অথচ তার মনেই নেই। অফিসের ম্যানেজারের ফোন পেয়ে রাজীবের মধ্যে খুবই হীনমন্যতাবোধ কাজ করছে। ফোনটা রেখে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রাজীব ভাবতে থাকে সে‌ হয়ত কোন কিছুরই যোগ্য না। রাজীবের সবচেয়ে কাছের বন্ধু অভি গত কয়েকদিন তাকে ফোন করছে কিন্তু রাজীব বারবার কেটে দিয়েছে। তার মনে অনেক কিছু বলার আছে অথচ কারও সাথে কথা বলতেও প্রচন্ড দ্বিধা হচ্ছে।  প্রতিদিন এভাবেই তার দিন চলে যাচ্ছে তীব্র মানসিক যন্ত্রণায়। অথচ কয়েক মাস আগেও রাজীবের অবস্থা এমন ছিল না‌।  একরকম জোর করেই অভি রাজীবকে সাইকোলজিস্ট এর কাছে নিয়ে যায়। রাজীবের গত কয়েক মাসের ঘটনার বিবরণ থেকে জানা গেল সে বিষন্নতায় ভুগছে।

বিষন্নতা কী?

বিষন্নতা বা ডিপ্রেশন ব্যাপারটি বেশ জটিল এবং এর প্রেক্ষাপট বিশাল। এটি একটি সাইকোলজিক্যাল ডিজঅর্ডার। ডিপ্রেশনকে মূলত দুই ভাগে ভাগ করা যায়- unipolar depression এবং bipolar disorder। সাধারণত ডিপ্রেশন বলতে আমরা Unipolar Depression কেই বুঝি। DSM-5 অনুযায়ী,‌ দুই সপ্তাহের অধিক সময় ধরে ব্যক্তির মধ্যে ক্রমাগত ডিপ্রশনের বিভিন্ন লক্ষণ দেখা দিলে ব্যক্তি ডিপ্রেশনে ভুগছে ধরা হয়। সময় ব্যবধান(duration) এবং লক্ষনের উপর ভিত্তি করে এর মাত্রা ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে।

ডিপ্রেশনের লক্ষণসমূহ

ডিপ্রেশনের লক্ষণগুলোকে পাঁচটি ক্ষেত্রে ভাগ করা যায়। প্রতিটি ক্ষেত্রেরই আলাদা আলাদা সাইকোলজিক্যাল টার্ম রয়েছে। বোঝার সুবিধার্থে এখানে প্রত্যেক ক্ষেত্রের কিছু উদাহরণ দেয়া হল।

১| ব্যক্তির মধ্যে নেতিবাচক আবেগ যেমন: কষ্ট, রাগ, উদ্বেগ

বেড়ে যায়। কোন কোন সময় ব্যক্তি হয়ত কোন কাজেই আর আনন্দ বা আগ্রহ খুঁজে পায়না।

২| ব্যক্তির মধ্যে কাজ করার অনুপ্রেরণা বা উদ্যোগ, স্বতঃস্ফূর্ত মনোভাব থাকেনা। এমনকি বন্ধু বান্ধবের সাথে কথা বলা বা ঘুরাফিরা করাও নানা অজুহাতে এড়িয়ে যায়।

৩| ব্যক্তির আচরণে স্পষ্ট পরিবর্তন আসে। তারা আগের মত কাজে মনোযোগ দিতে পারেনা। হঠাৎ করেই হয়ত আড্ডায় প্রাণবন্ত মানুষটি একা থাকা শুরু করে।

৪| ডিপ্রেশনে ভোগা মানুষ প্রায়ই হীনমন্যতায় ভোগে। অপরের তুলনায় নিজেকে ছোট মনে করে‌ আর নিজেকে নিয়ে হতাশায় ভোগে।

৫| ডিপ্রশনের কারণে মাথাব্যথা, মাথা ঘোরানো, খাওয়ায় অরুচি ইত্যাদি বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।

ডিপ্রেশন কেন হয়?

ডিপ্রেশন বিভিন্ন কারণে হতে পারে। ডিপ্রেশন হতে পারে সরাসরি জীবনের কোন ঘটনার কারণে এমনকি মানবদেহের হরমোনের কারণেও হতে পারে। সেরেটোনিন এবং নরএপিনেফ্রিন হরমোন নিঃসরণ কমে গেলে ব্যক্তির মধ্যে ডিপ্রেশন দেখা দিতে পারে। ছোটবেলার কোন দুঃসহ স্মৃতি মানুষের মনে জায়গা করে ফেললেও মানুষ ডিপ্রেশনে ভুগতে পারে। তাছাড়া আরও অনেক কারণে ব্যক্তি বিষন্ন হয়ে পড়ে যেমন: নেতিবাচক চিন্তা ধারনা, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে, সামাজিক চাপে  ইত্যাদি।

ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায়

ভিন্ন ভিন্ন মানুষের মধ্যে ডিপ্রেশনের কারণ যেমন ভিন্ন হয় তেমনি ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায়ও ব্যক্তি বিশেষে ভিন্ন ভিন্ন হয়। দক্ষ কাউন্সিলর এর সাথে নিজের সমস্যা আলোচনা করে এর সমাধান পাওয়া যেতে পারে। তাছাড়া নিজের নেতিবাচক চিন্তাগুলো ভালভাবে চিহ্নিত করে চিন্তায় ইতিবাচকতা আনতে হবে। ধীরে ধীরে বাইরের মানুষ আর পরিবেশে খাপ খাইয়ে নেয়ার চেষ্টা করতে হবে। বন্ধু নির্বাচনে সতর্ক হতে হবে। অনেক সময় বন্ধুদের সাথে শেয়ার করলেই সমাধান বেরিয়ে আসতে পারে আবার অনেক ‌সময় বন্ধুরাই বাঁকা কথার দ্বারা ব্যক্তির মধ্যে হীনমন্যতাবোধ সৃষ্টি করে। নিজের সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা আর আত্মবিশ্বাস গড়ে তুলতে হবে।

(সামিরা মাহজাবিন)

সময় নষ্ট নাকি নিজেকে সময় দেয়া?

Share

রাইসা ইউনিভার্সিটির শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী। তার বাসা ইউনিভার্সিটি থেকে বেশ দূরে। রাইসার প্রতিটা দিন শুরু হয় ভোরবেলা। ইউনিভার্সিটির সকাল আটটা থেকে বিকেল পর্যন্ত ক্লাস করে, তারপর টিউশন করানো শেষে ঢাকা শহরের জ্যাম ঠেলে বাসায় আসতে আসতে রাইসার প্রতিদিনই অনেক দেরি হয়ে যায়। ক্লান্ত শরীরে রাইসার আর কোন কাজ করতেই ইচ্ছা করে না। এভাবে প্রতিদিনকার ব্যস্ততার মাঝে রাইসার প্রায়ই মনে হয় তার সারাদিন প্রচুর কাজ করার পরেও কোন কাজই ঠিকমতো হচ্ছে না। এই কারণে সে ইদানিং বেশ অস্বস্তি বোধ করছে আর কাজের প্রতি সঠিকভাবে মনোযোগ দিতে পারছেনা।

প্রতিদিনের ব্যস্ত জীবনে রাইসার মত আমাদের অনেকের  মনে হয় সময় কোথা দিয়ে পার হয়ে গেল টেরই পাওয়া গেল না। অত্যন্ত ব্যস্ততার কারণে আমরা না আপনজনদের সময় দিতে পারি না পারি নিজেকে সময় দিতে। অনেক সময় আবার শখের বা বিনোদনমূলক কাজগুলোকে কেউ কেউ সময় নষ্ট বলেও মনে করে। কিন্তু আসলেই কি তাই? নিজেকে সময় দেয়া বা self care মোটেও সময় নষ্ট করা নয়। বরং এটা মানুষের মন ভালো রাখতে ও কাজে মনোযোগী হতে সাহায্য করে। নিজের যত্ন নেওয়ার বিষয়টিকে প্রায় মানুষই যথাযথ গুরুত্ব দেয়না। অথচ নিজের প্রতি আমাদের এই সামান্য মনোযোগ আমাদের আমাদের স্ট্রেস লেভেল কমিয়ে কর্মক্ষমতা বাড়াতে আর কাজে উৎফুল্ল থাকতে সাহায্য করতে পারে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, বিনোদনমূলক কাজ বা recreational activities মানুষের স্ট্রেস, anxiety বা উদ্বিগ্নতা, ডিপ্রেশন কমাতে এবং আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করে। এটা মানুষের মধ্যে ইতিবাচক চিন্তাধারার বিকাশ ঘটাতেও সহায়তা করে। বিভিন্ন মানুষের self care এর ধরন বিভিন্ন রকমের হতে পারে। এর কোন ধরা বাঁধা নিয়ম নেই। যেমন অনেক মানুষই ছুটি পেলেই শহর থেকে দূরে প্রকৃতিকে কাছ থেকে দেখতে পাহাড় বা সমুদ্র দেখতে ছুটে যান। ভ্রমণ মানুষের মাঝে অনন্য প্রাণশক্তি আর পজিটিভ এনার্জির সঞ্চার করে যা মানুষকে উদ্যোমী করে তোলে। আবার অনেকে ভ্রমনের চেয়ে বেশি বই পড়ে উজ্জীবিত হয়। সেক্ষেত্রে শত ব্যস্ততার মাঝে কিছুটা সময় বই পড়লে তার সময় নষ্ট হয়না বরং তা পরবর্তীতে তার কাজের প্রতি মনোযোগী হতে সাহায্য করে। প্রত্যেক মানুষেরই আলাদা পছন্দ থাকতে পারে এবং সে অনুযায়ী self care এর ধরন ভিন্ন ভিন্ন হয়। দিনের কিছুটা সময় পছন্দের কাজে ব্যয় করা মানুষের মন ভালো রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

শখের বা পছন্দের কাজ করার সময় প্রায়শই সময় কখন পার হয়ে যায় টের পাওয়া যায় না। এক্ষেত্রে নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ আর কাজের প্রায়োরিটির কথা মাথায় রাখাটা জরুরি। অনেক স্ট্রেসপূর্ণ কোন সপ্তাহের শেষে নিজের পছন্দের মুভি দেখাটা আনন্দের হলেও পরীক্ষার আগের দিন পরীক্ষার পড়া বাদ দিয়ে পছন্দের মুভি দেখাটা ক্ষতির কারণ হিসেবেই গণ্য হবে।

মানুষের জীবনে কাজ আর বিশ্রামের সমন্বয় থাকাটা খুবই জরুরি। অতিরিক্ত কাজের চাপ যেমন মানুষের জন্য ক্ষতিকর তেমনিভাবে প্রয়োজনীয় কাজ ফেলে রেখে অতিরিক্ত সময় recreation এ ব্যয় করাটাও কাম্য নয়।

চঞ্চলতার ডিসঅর্ডার

Share


রাতুলের বয়স সাত। তার বাবা-মা তাকে নিয়ে খুবই চিন্তিত। কারণ এ নিয়ে ২ মাসের মাথায় ৫ম বারের মত রাতুলের শিক্ষক তার বাবাকে স্কুলে ডেকে তার নামে অভিযোগ দিয়েছে যে সে খুব চঞ্চল। রাতুল ক্লাসে অনেক কথা বলে। প্রায়ই শিক্ষকের দিকে মনোযোগ না দিয়ে কাগজ নিয়ে খেলতে থাকে। শিক্ষক তাকে ধমক দিলে সে নিজেও তার জিদ প্রকাশ করে। ক্লাসে সে বড়ই অধৈর্য। ঠিকমত ক্লাসের কাজ করেনা। খাতাপত্র হারিয়ে ফেলে। এই শুনে রাতুলের বাবার মনে পড়লো আসলেই তো! রাতুল গত এক মাসে ১১ বার তার পেনসিল রাবার হারিয়ে ফেলেছে, বাংলা বই এই নিয়ে ৩বার কিনে দেয়া হয়েছে। শিক্ষক রাতুলের বাবাকে পরামর্শ দিলেন রাতুলকে নিয়ে কোনো একটি মানসিক চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে।

ADHD বা Attention Deficit hyperactivity disorder কে বাচ্চাদের মধ্যে অন্যতম একটি নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার হিসেবে গণ্য করা হয়। এটি সাধারণত বাচ্চাদের মধ্যেই বেশি দেখা যায় তবে এর বিস্তৃতি বড়দের মধ্যেও পাওয়া যায়। ADHD তে আক্রান্ত বাচ্চারা সাধারণত কোনোকিছুতে মনোযোগ ধরে রাখতে বেশ ঝামেলার মধ্যে পড়ে। অনেকসময় দেখা যায় নিজদের ব্যবহারকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যর্থ হয় কিংবা অতিচঞ্চল স্বভাবের হয়ে থাকে।

লক্ষণঃ কিভাবে বুঝবেন আপনার বাচ্চা ADHD তে আক্রান্ত? বাচ্চাদের মধ্যে মনোযোগ হারিয়ে ফেলা কিংবা চঞ্চলতা খুবই স্বাভাবিক একটি জিনিস। তবে এই ADHD তে আক্রান্ত বাচ্চাদের মধ্যে এই চঞ্চলতা কিংবা মনোযোগহীনতা খুব প্রকট ভাবে দেখা যায়। কিছু লক্ষণ হলো- মনোযোগ হারিয়ে দিবাস্বপ্ন দেখা, যেকোনো বিষোয় নিয়ে প্রচণ্ডরকমের অধৈর্য হওয়া, যেকোনো কিছু ভুলে যাওয়া, স্কুলে কিংবা স্কুলের বাইরে বারবার জিনিসপত্র হারিয়ে ফেলা, জিদ দেখানো, অন্যদের সাথে সহজে মিশতে না পারা। ADHD বাচ্চার স্কুল এবং বাইরের পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে সমস্যার সৃষ্টি করে বিধায় বাচ্চাদের মধ্যে এই লক্ষণগুলো দেখা দিলে তাকে শুধুমাত্র “আরে ও একটু চঞ্চল, বড় হলে ঠিক হয়ে যাবে” ইত্যাদি বলে অবহেলা করা উচিত নয়।

বাচ্চাদের ভিতর সাধারণত তিন ধরণের ADHD দেখা যায়। ১) প্রিডমিনেন্টলি ইনএ্যাটেনটিভ প্রেজেন্টেশনঃ এখানে বাচ্চারা তাদের যেকোনো কাজ সম্পন্ন করতে অসুবিধা বোধ করে। মনোযোগ দিতে পারেনা অথবা নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করতে পারেনা। খুব সহজেই বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে, স্কুলের রুটিন কিংবা ক্লাসের কাজ ভুলে যায়।  ২) প্রিডমিনেন্টলি হাইপার এ্যাক্টিভ-ইম্পালসিভ প্রেজেন্টেশনঃ এখানে বাচ্চাকে অতিরিক্ত উসখুস করতে দেখা যায়। কোনো একজায়গায় সে স্থির হয়ে বসতে পারেনা; অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যেতে থাকে। সারাক্ষণ দৌড়-ঝাঁপের মধ্যে থাকতে দেখা যায়। স্কুলে অন্যদের কাজে অনবরত বিঘ্ন ঘটানো, অন্যদের জিনিসপত্র কেড়ে নেয়া, নির্দেশনা মানতে না চাওয়া কিংবা অধৈর্য হয়ে যাওয়া ইত্যাদি লক্ষণ দেখা যায়। এরকম অতিচঞ্চলতা বাচ্চার নিজের এবং তার আশেপাশের মানুষের দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। ৩) কম্বাইন্ড প্রেজেন্টেশনঃ প্রথম দুই ধরণের লক্ষণগুলো সমানভাবে বাচ্চার মধ্যে প্রকাশ পায়। সময়ের সাথে লক্ষণগুলোর মাঝে বেশ পরিবর্তন দেখা যায়।

ADHD কেন হয়? বিজ্ঞানীরা ডিসঅর্ডারটির মূল কারণ বের করতে না পারলেও মূলত জেনেটিক সমস্যাকে ADHD এর জন্য দায়ী করেছেন। ব্রেইনে ডোপামিন ট্রান্সমিশনের পরিমাণ কম হওয়া ছাড়াও আরো কিছু কারণকে বিজ্ঞানীরা প্রাথমিক ভাবে ADHD এর জন্য দায়ী করেন। যেমন- ব্রেইন ইঞ্জুরি, গর্ভাবস্থায় মায়ের এ্যালকোহল কিংবা অন্যান্য ড্রাগের সাথে জড়িত থাকা, প্রিম্যাচিউর ডেলিভারি, জন্মের সময় বাচ্চার ওজন কম থাকা ইত্যাদি। বাচ্চার ADHD এর কারণ হিসেবে অতিরিক্ত টিভি দেখা, প্যারেন্টিং স্টাইল কিংবা আশেপাশের পরিবেশের সম্পৃক্ততা থাকার কথা বিজ্ঞানীরা অস্বীকার করলেও এগুলো ADHD এর লক্ষণগুলোর প্রবলতা বাড়িয়ে তুলতে সহায়তা করে বলে কিছু গবেষণাই পাওয়া যায়।

চিকিৎসাঃ সাধারণত ADHD এর চিকিৎসা হিসেবে মূলত বিহেভিয়ার থেরাপি এবং মেডিকেশনকেই বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়। ৪-৫ বছর বয়সীদের জন্য থেরাপী, এবং বাচ্চার বাবা-মার জন্য আলাদা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাকেই প্রাথমিক চিকিৎসা বলে মনে করা হয়। এছাড়া ডিসঅর্ডারটির প্রাবল্যতা অনুসারে পরবর্তীতে বাচ্চাকে মানসিক চিকিৎসকের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে তার নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।

ADHD তে আক্রান্ত বাচ্চারা সাধারণত হীনমন্যতায় ভুগে থাকে কারণ তারা কারো সাথে সঠিকভাবে মিশতে পারে যার কারণে তাদের বন্ধু সংখ্যা নাই বললেই চলে। এবং পরবর্তীতে তাদের ডিপ্রেশনে ভোগার সম্ভাবনার হার খুব বেশি। তাই তাদের সাথে তাদের পরিবার এবং আশেপাশের মানুষের সহযোগিতাই পারে তাদের জীবন অনেকখানি সহজ করে দিতে।সুস্থ থাকা প্রত্যেক বাচ্চার জন্যই অতি গুরুত্বপূর্ণ। এবং যখন বাচ্চাটি ADHD ডিসঅর্ডার সম্পন্ন তখন তার জন্য এটির গুরুত্ব আরো কয়েকগুণ বেড়ে যায়। থেরাপী কিংবা মেডিটেশনের পাশাপাশি একটি সুস্থ জীবনধারা বাচ্চাকে ADHD এর লক্ষণগুলোর সাথে মানিয়ে চলতে সাহায্য করে।

নুজহাত জাহানারা

অ্যাকুয়াম্যান নাকি অ্যাকুয়াফোবিক?

Share

তাহমিদ পানি ভয় পায়। এতটাই ভয় পায় যে কোমর পানিতে নামতেও তার প্রচন্ড ভয়, “যদি ডুবে যাই”। পানির প্রতি এই ভয়ের ফলে সে নৌকা বা লঞ্চেও চড়তে চায় না। নদী দেখলেই তার মধ্যে এক ধরণের অস্থিরতা কাজ করে। সে প্রচন্ড রকমের মানসিক চাপ অনুভব করতে শুরু করে। মাঝে মাঝে দম বন্ধ হয়ে আসে।

আমাদের আজকের চরিত্র তাহমিদের রয়েছে অ্যাকুয়াফোবিয়া বা পানিভীতি। পানির প্রতি ভয় আমাদের অনেকেরই রয়েছে। সাগর বা খরস্রোতা নদী দেখে ভয় পাওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। লিন্ডাল এবং স্টিফ্যানসনের মতে বিশ্বের ১.৮% মানুষের অ্যাকুয়াফোবিয়া রয়েছে। যাদের এই অ্যাকুয়াফোবিয়া রয়েছে তারা আসলে কি ভয় পায়? সাধারণত তারা এই ভয় পায় যে তারা ডুবে মারা যাবে কিংবা পানির স্রোতে তারা ভেসে যাবে। অনেকে ভাবে সে এমন ভয়ানক কোনো কিছুর অভিজ্ঞতা হবে যা কিনা শুধুমাত্র কল্পনাই করা যায়; হয়ত পাইরেটস অফ দি ক্যারিবিয়ান কিংবা অ্যাকুয়াম্যান মুভির বিশাল অক্টোপাস “ক্র্যাকেনের” মত কোনো কিছু এসে তাকে গ্রাস করে নিয়ে যাবে। এই পানিভীতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে আমাদের জানতে হবে এর কারণ, লক্ষণ এবং এর প্রতিকার সম্পর্কে।

পানিভীতির কারণ হিসেবে মনোবিজ্ঞানীরা মূলত ব্যক্তির পূর্ব অভিজ্ঞতাকেই দায়ী করে থাকেন। হয়ত কেউ পুকুর বা নদীতে গোসল করতে যেয়ে প্রায় ডুবে যাচ্ছিলেন কিংবা বন্ধুরা মিলে মজা করে পানিতে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে অথবা চোখের সামনে কাউকে ডুবে যেতে দেখাও পানিভীতির সৃষ্টি করে। ছোটবেলার পানি সম্পর্কিত কোনো ঘটনার আকস্মিকতা কিংবা বিপজ্জনক ঘটনার অভিজ্ঞতাই পানিভীতি তৈরী করতে পারে। আমেরিকার একটা ঘটনার কথা জানা যায়, যেখানে একটি বাচ্চা মেয়ে তার পরিবারের সাথে পিকনিকে যেয়ে একটা ঝরণার সামনে কিছু লতাপাতার ঝোপে পা আটকে যায়। সে ভয়ে চিৎকার করতে থাকে। তার বাবা মা তাকে সেখান থেকে সুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করতে পারলেও আস্তে আস্তে মেয়েটির মধ্যে অ্যাকুয়াফোবিয়ার লক্ষণ দেখা দিতে থাকে। পরে তাকে সাইকোলজিস্টের কাছে নেয়া হলে তার এই অ্যাকুয়াফোবিয়ার কারণ হিসেবে জানা যায় যে ছোটবেলায় সেই ঝোপে আটকে যাবার পর সামনে থাকা ঝরণার প্রবল স্রোত এবং পানির শব্দে সে একটু ভয় পেয়ে গিয়েছিলো যে হয়ত সেই স্রোত তাকে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। ফলে এখনো পানি পড়ার আওয়াজ শুনলে কিংবা গভীর পানি দেখে সে ভয় পাচ্ছে।

ব্যক্তির অ্যাকুয়াফোবিয়ার লেভেল বা প্রাবল্য বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। সাধারণত মানুষ তাদের নিজের উচ্চতার বেশি পানিকেই ভয় পায়। যে ব্যক্তি হাঁটুপানিতে বন্ধুদের সাথে মজা করছে, সেই হয়ত গলা সমান পানিতে নামলে অ্যাকুয়াফোবিক হয়ে পড়ছে। আবার কারো হয়ত পানির স্পর্শ কিংবা পানির গভীরতার কথা চিন্তা করতেই ঘাম ছোটা শুরু হয়েছে। বিভিন্নভাবে ব্যাক্তির ভেতর অ্যাকুয়াফোবিয়ার লক্ষণ বোঝা যায়। গভীর পানি দেখলে অত্যন্ত অস্বস্তিবোধ করা, বুক ধড়ফড় করা। পানির উপস্থিতি টের পেলে শ্বাস প্রশ্বাসে ব্যাঘাত ঘটা এমনকি ব্যক্তি জ্ঞান হারিয়ে ফেলতে পারেন। পানির গভীরতার কথা চিন্তা করে শরীরে কাঁপুনি, ঘাম হওয়া থেকে শুরু করে প্যানিক এ্যাটাক পর্যন্ত হতে পারে।

অ্যাকুয়াফোবিয়ার প্রতিকার অন্যান্য ফোবিয়ার মতই। মনোবিজ্ঞানীদের ভাষায় তিনটি উপায়ে এই ফোবিয়া থেকে প্রতিকার পাওয়া যায়।

১) মডেলিং : এখানে থেরাপিস্ট নিজে পানিতে নামেন এবং অ্যাকুয়াফোবিক ব্যক্তি সেটি দেখেন। কয়েক সেশনের পর অ্যাকুয়াফোবিক ব্যক্তি নিজেও পানির ব্যাপারে সাহস পেতে শুরু করেন।

২) ফ্লাডিং: মনোবিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন একজন অ্যাকুয়াফোবিক ব্যক্তি তখনই পানিভীতি দূর করতে পারবেন যখন ব্যক্তি বারবার পানিতে নিজেকে প্রকাশ করবেন এবং বুঝতে পারবেন পানি আসলে তেমন বিপদজনক কিছু নয়। অর্থাৎ পানিভীতি দূর করতে বারবার পানির কাছে যাওয়াই হচ্ছে অ্যাকুয়াফোবিয়ার অন্যতম প্রতিকার।

৩) সিস্টেমেটিক ডিসেন্সিটাইজেশনঃ এই প্রক্রিয়াটি এক ধরণের চক্র মেনে চলে। এখানে প্রথমে থেরাপিস্ট অ্যাকুয়াফোবিক ব্যক্তিকে রিল্যাক্সেশন ট্রেনিং করান। এরপর তিনি তার সামনে কিছু ঘটনা বর্ণনা করেন এবং ব্যক্তিকে সেটি কল্পনা করতে বলেন। হয়ত প্রথমে তিনি ব্যক্তিকে সুইমিংপুলের পাশে হেঁটে যাওয়ার একটি ঘটনা বর্ণনা করলেন। এরপরের ধাপে ব্যক্তি হয়ত হাত দিয়ে পানিকে স্পর্শ করছে। তার পরের ধাপে ব্যক্তি পানিতে পা ডুবিয়ে বসেছেন। এভাবে  থেরাপিস্ট তার বর্ণনার মধ্যে ঘটনার ইন্টেন্সিটি বাড়াতে থাকেন এবং ব্যক্তির রিএ্যাকশন বুঝে তাকে রিল্যাক্সেশন ট্রেনিং দিতে থাকেন। এটি সাধারণত অত্যন্ত ভয়াবহ রকমের অ্যাকুয়াফোবিক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়।

আমাদের নদীমাতৃক বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে একজন মানুষের অ্যাকুয়াফোবিক হওয়াটা যেমন স্বাভাবিক তেমন বিপজ্জনক। অ্যাকুয়াফোবিক ব্যক্তি তার এই পানিভীতি থেকে পরিত্রাণ পেতে থেরাপিস্ট, কাউন্সিলর কিংবা প্রফেশনাল সুইমিং ট্রেইনারের সাহায্য নিতে পারেন।

আশিক মাহমুদ