“তুমি তোমার সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করেছো ইমন। এ প্লাস না আসলেও তোমার রেজাল্ট যথেষ্ঠ ভালো। এটা নিয়ে ভেঙে পড়োনা। এখন থেকে আরো ভালো করে চেষ্টা করো যাতে সামনে এটির চাইতেও ভালো ফলাফল আসে।“ এভাবেই ইমনকে বোঝাচ্ছিলেন তার বাবা। এইতো কয়েকদিন আগে ইমনের মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ পেয়েছে। এ-প্লাসটা শুধুমাত্র ফিজিক্সের জন্য মিস হয়ে গিয়েছে। এ নিয়ে তার হতাশার শেষ নেই। ফলাফল প্রকাশের পর দুইদিন তো ঘর থেকেই বের হয়নি সে। ইমনের বাবা মা তাকে অবশ্য ওর তারিফই করছেন। কারণ তারা দেখেছেন ছেলেটা বেশ চেষ্টা করেছে পরীক্ষার সময়টিতে।
যখন আমরা কারো কোনো কাজের জন্য তার প্রশংসা করি, আমরা সেই ব্যক্তির মনোবল কিংবা আত্মবিশ্বাসটিকে বাড়িয়ে তুলি। অ্যাপ্রিশিয়েশন কিংবা মূল্যবোধ শব্দটি বাইরে থেকে ছোট দেখালেও এর প্রভাব অনেক বড়। কখনো কখনো এটির সঠিক ব্যবহারের ফলে আমরা ব্যক্তিকে তার পরবর্তী কাজগুলোতে আরো বেশি কিছু অর্জন করার প্রেরণা দান করতে পারি। অনেকেই আছেন যারা জানেন এই অ্যাপ্রিশিয়েশনের গভীরতা এবং এর সঠিক প্রয়োগ কিভাবে অন্যকে মোটিভেট করতে পারে। পরিবার থেকে শুরু করে কর্মক্ষেত্র; সবজায়গাতেই “অ্যাপ্রিশিয়েশন” একটি নেতিবাচক পরিবেশকে ইতিবাচক রূপে পরিবর্তিত করতে পারে। একটু হাসিমুখে ধন্যবাদ জানানো কিংবা সহকর্মীর কোনো সাহায্যের বিপরীতে তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করাই পারে আমাদের আশেপাশের পরিবেশের উপর একটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে। যখন আমাদের ভাই-বোন কিংবা বন্ধু পরীক্ষায় আশানুরুপ ফলাফল অর্জন করতে না পারে কিংবা আমাদের কোনো সহকর্মী কোনো একটি কাজে ব্যর্থ হন তখন তাদের সমালোচনা না করে অ্যাপ্রিশিয়েট করা উচিত। কারণ এই ছোট একটু অ্যাপ্রিশিয়েশন তাদের মধ্যে আরো ভালো করার প্রেরণা জোগাবে। আমরা যদি তাদের অর্জনকে ছোট করে দেখি কিংবা তাদের কাজের প্রতি অতি সমালোচনামূলক মনোভাব পোষণ করি তবে তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। সে নিজেকে মূল্যহীন কিংবা ইউজলেস মনে করতে পারে। এতে বরঞ্চ লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি। ব্যক্তি আরো ভালো কিছু করার উদ্যম হারিয়ে ফেলতে পারে। প্রত্যেকেই চায় অন্যরা তার কাজের প্রশংসা করুক। ব্যক্তির কাজের বিপরীতে তাকে শুধু ধন্যবাদ না বলে “আপনি কাজটি ভালো করেছেন” কিংবা “চালিয়ে যাও” ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করলে সে পরবর্তীতে যেকোনো কাজে আরো ভালো কিছু অর্জন করার চেষ্টা চালায়। হয়ত অফিসের কোনো কাজে বসের বকা খেয়ে কাঁচুমাচু হয়ে থাকা কলিগকে তার চেষ্টার প্রশংসা করলেন, কিংবা পরীক্ষায় খারাপ করে আত্মীয় স্বজনের খোঁচায় জর্জরিত ছেলেকে একটু সাহস দিলেন; হাজারও সমালোচনার মাঝে আপনার একটুখানি অ্যাপ্রিশিয়েশনই হয়ত তাদের দিনটিকে ভালো করে দিতে পারে।
অ্যাপ্রিশিয়েশন শুধুমাত্র কর্মক্ষেত্রে নয় বরং জীবনের সকল ক্ষেত্রে ব্যবহার উপযোগী। পরিবার বন্ধু সবার প্রতি এই মূল্যবোধ অনুশীলন একটি ভালো গুণ। আপনার কোনো বন্ধু পরীক্ষায় মোটামুটি ভালো রেজাল্ট করেছে? তাকে অ্যাপ্রিশিয়েট করুন। সে পরবর্তীতে আরো ভালো কিছু করবার চেষ্টা করবে। আপনার প্রতিবেশী আপনার কোনো উপকার করেছেন? তার এই কাজকে অ্যাপ্রিশিয়েট করুন। আপনার স্বামী কিংবা স্ত্রী আপনার জন্য সুন্দর কোনো উপহার এনেছেন? তাকে হাসিমুখে অ্যাপ্রিশিয়েট করুন। সময়মত অ্যাপ্রিশিয়েট করা মানুষের মধ্যে সম্পর্ক ভালো রাখে। কারো প্রচেষ্টার প্রশংসা করার মাধ্যমে আপনি নিজের একটি ইতিবাচক দিক প্রকাশের সুযোগ পাবেন। এটি প্রমাণ করবে যে আপনি অন্যদের ছোট ছোট কাজেরও মূল্য দিতে জানেন। সেজন্য যখনই সম্ভব আপনার পাশের মানুষটির প্রতি অ্যাপ্রিশিয়েশন দেখানো জরুরী। এতে মানুষের সাথে আপনার সম্পর্কের উন্নতি হবে। অন্যরা আপনাকে গুরুত্ব দিবে ঠিক যেমনটা আপনি তাদের দিচ্ছেন। এটি অল্প হলেও আপনার জীবনের কিছু কাজকে সহজ করে তুলবে।
কৃতজ্ঞতা, মূল্যবোধ কিংবা অ্যাপ্রিশিয়েশন যাই বলা হোক না কেনো; এটি যদি সঠিকভাবে ব্যবহার করা হয় তবে এর সুফল অবশ্যম্ভাবী। গঠনমূলক সমালোচনা উপকারী, তবে চেষ্টা করুন অন্যের কাজের অতি সমালোচনার বদলে প্রশংসা করে তাকে আরো ভালো কিছু করার উৎসাহ দেয়ার। চারপাশের পরিবর্তনগুলো আপনি নিজেই দেখতে পাবেন।
আশিক মাহমুদ