বর্ডারলাইন পার্সোনালিটি হৃদয়ের কথা।
মানুষ কেবল অস্থিমজ্জাগত কোন একটা বিশেষ প্রাণী নয়। মানুষের একটা হৃদয় আছে। সেই হৃদয়ে অসংখ্য অলি গলি যেমন আছে, তেমনি অনেক কানাগলিও আছে। হৃদয়ের গহীনে মানুষ লালন করে সভ্যতা, সংস্কৃতি। হৃদয় দিয়ে লালন করে সে ভালোলাগা, ভালোবাসা। আবার তার সেই হৃদয়েই স্থান করে নেয় ঘৃণা, হিংসা, বিদ্বেষ, লোভ, লালসা। শরীরটাতো তার বিচিত্রই। মেরুদন্ড সোজা করে আর কোনো প্রাণী আছে হাটতে পারে? হৃদয়টা আরো বিচিত্র। চিন্তায়, আবেগে, পতিক্রিয়ায়, আচরণে, ব্যক্তিত্বে প্রতিটা মানুষ ভিন্ন, আলাদা, স্বতন্ত্র, একক। শরীরের এনাটমিতেও মানুষে মানুষে অনেক বৈচিত্র রয়েছে। শরীর নিয়ে অনেক কিছু পাওয়া যাবে। আমি হৃদয়ের কথা বলিতে ব্যাকুল, শুধাইল না কেহ।
শরীরের যেমন বিশেষ একটা কার্যক্রম থাকে আমাদের হৃদয়ের ক্ষেত্রেও সেটা প্রযোজ্য। মানুষতো অত্যন্ত ভঙ্গুর প্রানী। তার শরীর যেমন ব্যাধি আক্রান্ত হয়, হৃদয়টাও হয়। শব্দের ক্ষেত্রে আপনি হৃদয় বদলে মন, মস্তিষ্ক, আচরণ চিন্তা করে নিতে পারেন। হৃদয় আর মন বলাটা বুঝতে সহজ। মস্তিষ্ক বললে বড় কঠিন লাগে। আচরণ বললে আর্মির কড়া ডিসিপ্লিনড কিছু মনে হয়।
যাই হোক, ধরুন একজন মানুষ। তার শরীরে একটা রোগ হলে আমরা বলি শারীরিক রোগ। আর মনের অসুখ হলে?
কী আবার! মানসিক রোগ।
এই মানসিক রোগ নিয়ে আজকের আলোচনা।
সত্যি বলতে আমরা আজকে একটা বিশেষ মানসিক রোগ নিয়ে কিছু তথ্য জানার চেষ্টা করবো। তথ্য বলা কী ঠিক হবে? সত্যি বলতে আমরা কিছু লক্ষণ বুঝার চেষ্টা করবো যেগুলো আমাদের রোগটা বুঝতে সাহায্য করবে।
তার আগে সতর্কতা!
অনেক সময় আমরা রোগের লক্ষণের সাথে নিজেদের মিলানোর চেষ্টা করি। কিছু লক্ষণ মিলে গেলেই আমরা দুশ্চিন্তায় দর দর করে ঘামতে শুরু করে দেই। সচেতনতা ভালো অতি সচেতনতা ভালো কিছু না। বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া নিজের মধ্যে রোগ আবিষ্কার করা এবং নিজেকে রোগাক্রান্ত ভাবা ঠিক হবেনা।
রোগটার সংক্ষিপ্ত নাম বিপিডি। বর্ডারলাইন পারসনালিটি ডিসর্ডার।
নাম শুনে বুঝাই যাচ্ছে, এইটা একটা পার্সনালিটি ডিসর্ডার।
অর্থাৎ ব্যক্তিত্বসংক্রান্ত রোগ।
এর নাম বর্ডারলাইন মূলত এই কারণে এটা নিউরিসিস এবং সাইকোসিস এই দুই প্রকারের রোগের মধ্যবর্তি একটি মানসিক রোগ। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির কষ্ট প্রচন্ড। শুধু তাই নয় এই রোগে আক্রান্ত রোগীর পরিবারের সদস্যরাও নানান ভাবে বিপর্যস্থ হয়ে থাকে।
এই রোগে মানুষটা কিছুতেই তার আবেগের সঠিক নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনা। তার মূল সমস্যার শুরু হবে অন্যদের সাথে তার সুসম্পর্কের অবনতির মাধ্যমে। অর্থাৎ সকল সম্পর্ক ভঙ্গুর। অন্যদের সাথে তার সম্পর্ক, আত্ম প্রতিকৃতি, অনুভুতি এই সবকিছু ভেঙ্গে পড়ে। মূলত সমস্যা শুরু হয় বয়ঃস্বন্ধি থেকে অথাবা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পূর্ব সময়ে। এই রোগটা ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের বেশী হয়।
এই মানসিক রোগটির ক্ষেত্রে কিছু নির্দিষ্ট লক্ষণ কাজ করে। এই লক্ষণ গুলো ডায়াগনসিস অব স্ট্যাটিসটিকাল ম্যানুয়াল পঞ্চম সংশোধনী থেকে নেয়া হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে আমি আমার মত সংযোজন করেছি আবার সংক্ষিপ্ত করেছিও।
- ১) এসব ব্যক্তি তার পরিবেশের প্রতি সংবেদনশীল হয়ে থাকে। সম্পর্ক বিচ্ছেদ তার পক্ষে মানা অসম্ভব। সে বিচ্ছেদের ভয়ে থাকে। বিচ্ছেদ তার চিন্তার কাঠামো, আত্মপ্রতিকৃতি, অনুভূতি আর আচরণ পাল্টে দেয়। প্রত্যখ্যান অর্থ সে একজন খারাপ ব্যক্তি। এমন ব্যক্তি সবসময় একাকিত্বকে ভয় পেয়ে থাকে।
- ২) ব্যক্তি সম্পর্কের মূল্যায়ন করতে দ্বান্দিক অবস্থান তৈরী করে। একবার কাউকে ভালো বললো তো, একটু পরেই সে খারাপ। এই ধাচ থেকে সে বের হতে পারেনা।
- ৩) ব্যক্তি আত্মপরিচয় সংকটে ভোগে। তার নিজের সম্পর্কে ধারণার সচ্ছতা থাকেনা। মোদ্দা কথা সে নিজেই জানেনা সে কী
- ৪) ব্যক্তি নিজের জন্য ক্ষতিকর এমন কাজে জড়িত হয়। যেমন প্রচুর খরচ করা, মাদক গ্রহণ করা, যৌনদোষ, বেপরোয়া গাড়ি চালানো, অতিরিক্ত খাওয়া দাওয়া করা ইত্যাদি।
- ৫) আত্মহত্যার প্রচেষ্টা, হুমকি দেয়া, নিজেকে আঘাত করা যেমন, হাত পা কাঁটা।
- ৬) অনুভূতির তারতম্য ঘটে। একবার বিরক্ত তো আরেকবার চিন্তিত। এই মেঘ এই বৃষ্টি।
- ৭) এইটা জীবনানন্দের কবিতার একটা লাইনের মত “সব কাজ তুচ্ছ হয়, পন্ড মনে হয়, সব চিন্তা — প্রার্থনার সকল সময় শূন্য মনে হয়, শূন্য মনে হয়!” অর্থাৎ ব্যক্তির মধ্যে একটা শূন্যতার অনুভূতি সৃষ্টি হয় যেখানে সবকিছু তুচ্ছ, ম্লান, অর্থহীন।
- ৮) ব্যক্তি অযথা রাগ করে, রাগ নিয়ন্ত্রণে ব্যার্থ হয়।
- ৯) ব্যক্তির মধ্যে নিজস্ব চেতনা থেকে তার আবেগ এবং শরীর, বাহিরের দুনিয়াকে আলাদা মনে করা অর্থাৎ ডিজ-এসোসিয়েশন তৈরী হতে পারে। দৈনন্দিন স্বল্পস্থায়ী চাপের ক্ষেত্রে সে অল্পতেই অন্যদের সন্দেহ করতে শুরু করে এবং মনে করে তাকে অন্যরা সহ্য করতে পারেনা তার ক্ষতি করতে পারে অর্থাৎ ব্যক্তির মধ্যে প্যারানয়েড আইডিয়েশন দেখা দিতে পারে।
লক্ষণ গুলো কী আপনার মধ্যে আছে?
অনেক বেশী মিল পাচ্ছেন?
কী ভাবছেন?
আতঙ্ক!
ইটস ওকে! লেটস টক।
Creative arts by Ahnaf