প্রথম প্রথম খালি ভয় লাগে। হটাৎ তীব্র আতংক এ মনে হয় যেন সব কিছু ঘিরে আসছে। নিঃশাস বন্ধ হয়ে আসছে। একবার হয়ত কোনো আকস্মিক ঘটনায় ঘটল। সবাই বললো ভয় পেয়ে গিয়েছে। পানি খেয়ে, বিশ্রাম করে মাথা ঠান্ডা করা হলো।
প্যানিক এটাক এমনি হয়। অনেক সময় কোনো কারণ ছাড়াই। যেকারোর, যেকোনো সময়ে প্যানিক এটাক হতে পারে। অনেকে জীবনে কখনই এই রুম অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয় না । অনেকে মানসিক চাপে , শারীরিক অনিয়ম বা আকস্মিক ঘটনায় পড়লে প্যানিক এটাকে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। এটিকে অস্বাভাবিক, পাগলামির লক্ষণ বা অন্য কিছু না ভেবে তাৎক্ষণিক সঠিক কিভাবে প্রতিকার করা যায় সেটা ভাবা উচিত।
কিনতু, যখন কেউ বারবার কোনো আপাত কারণ ছাড়াই প্যানিক এটাক এ আক্রান্ত হয়, তখন তা প্যানিক ডিসঅর্ডার এর রূপ নেয়। প্যানিক ডিসঅর্ডার ব্যাধি এমন ব্যক্তিদের মধ্যে নির্ণয় করা হয় যারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে চলাচল এর মাঝে হটাৎ করে বা অপ্রত্যাশিতভাবে প্যানিক আক্রমনের সম্মুখীন হয় এবং সব সময় একটি আসন্ন আক্রমণের ভয়ে আতঙ্কিত থাকে। এই ক্ষেত্রে আক্রমণ যেকোনো সময় যেমন আনন্দের মুহূর্তে, এমনকি কখনও কখনও ঘুমের সময় ঘটতে পারে।
প্যানিক ডিসঅর্ডার যেকোনো সুস্থ এবং হাসিখুশি মানুষের হতে পারে। আবার অনেক সময় প্যানিক এটাক অন্য ডিসঅর্ডারের অংশ হিসাবে ঘটতে পারে, যেমন প্যানিক ডিসঅর্ডার, সোশ্যাল ফোবিয়া, বা বিষণ্নতা। কারণ যেটাই হোক, প্যানিক এটাক সম্পূর্ণ নিরাময় সাধ্য, মানে সঠিক ট্রিটমেন্ট এর মাদ্ধমে আমরা চাইলেই পারি এর প্রতিকার করতে।
এই সমস্যার সমাধানের প্রথম ধাপ হচ্ছে আগে লক্ষণগুলোকে নিশ্চিত করা। আমাকে বুঝতে হবে উপসর্গগুলো আসলে প্যানিক এটাক এর লক্ষণ নাকি অন্য কোনো সম্যসা। একটি প্যানিক আক্রমণের লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি সাধারণত হটাৎ করেই দেখা দেয় এবং সাধারণত 10 মিনিটের মধ্যে তাদের শিখরে পৌঁছায়। সর্বাধিক প্যানিক আক্রমণগুলি ২0 থেকে 30 মিনিটের মধ্যে শেষ হয়ে যায়, এবং সর্বোচ্চ এক ঘন্টার মতো সময় স্থায়ী হয়।
মাঝে মাঝে বা হটাত একবার দুইবার এই পরিস্থতির শিকার হলে তাতে সাধারনত উদ্দিগ্ন হবার কিছু থাকে না। কিন্তু প্যানিক ডিসঅর্ডার এর ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা ভিন্ন এবং আর জতিল হয়। আক্রান্ত ব্যাক্তি ঘন ঘন এই পরিস্থিতির শিকার হয় এবং তার মাঝে সারাখন ভয় কাজ করে এই বুঝি আবার ঘটল।
এইতো হল কিভাবে আমরা বুঝব আমাদের প্যানিক ডিসঅর্ডার আছে নাকি। যদি মনে হয় হ্যা, তাহলে সবার আগে যা করতে হবে তা হচ্ছে তাহল একে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক একটি রোগ হিসেবে দেখে এর চিকিৎসা করা। অনেকেই এই ধরনের সমসসা কাউকে খুলে বলেন না নিজেকে পাগল বা কোন কাজের অযোগ্য হিসেবে খ্যাত না করতে। কিন্তু আমরা বুঝি না, যেকোন রোগ, তা শরীরের হোক বা মনের, তা লুকালে আর বর এবং ভয়ঙ্কর কিছুর রুপ নেয়।
প্রথমেই একটি জার্নাল বা ডায়েরিতে অভিজ্ঞতাগুলো লিখে রাখা ভালো, এতে কত ঘন ঘন হচ্ছে বা কোন কোন লক্ষণগুলো দেখা যাচ্ছে তার হিসাব রাখা যায়, ডাক্তারকে সঠিক তথ্য দিয়ে আসলেই প্যানিক ডিসঅর্ডার কিনা তা সহজ সনাক্ত করতে সাহায্য করা যায়।
সনাক্ত করা হলে ডাক্তার হয়ত আপনাকে কোন মানসিক ডাক্তার বা স্পেসিয়ালিস্ট এর কাছে পাঠাবেন। সেক্ষেত্রে তাদের সাথে কথা বলে আপনার জন্য সবচেয়ে মানানসই চিকিৎসা আপনার জন্য নির্ধারণ করতে হবে।
প্যানিক ডিসঅর্ডার সাধারণত মনঃসমীক্ষণ (Psychotherapy) বা ঔষধ ব্যবস্থা অথবা উভয়ের প্রয়োগ করে ঠিক করা হয়।
মনের ভয় যখন আতঙ্কের রুপ নেয় তা অবশ্যই মানুষকে ভীষণ একা, নিয়ন্ত্রণহীন এবং দুর্বল করে ফেলে। কিন্তু নিজের সমস্যা নিজের কাছে লুকিয়ে রাখা বা সঠিক সমাধানের চেষ্টা না করাই সবচেয়ে বর ভুল। মনের ভয় তখন দিনে দিনে বড় হয়ে আর নতুন কোন রোগের রুপ নিয়ে ফেলে এবং আপনার উপরেই আপনাকে জয় করে ফেলে। তাই প্যানিক না হয়ে, নিজের মনকে জয় করুন।