সূচনা একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে। সে নিজেকে সবসময় সবচেয়ে মেধাবী, সুন্দরী, অভিজ্ঞ ও যোগ্যতাসম্পন্ন মনে করে এবং মনে করে সবাই তার গুণের প্রতি ঈর্ষাপরায়ণ। নিজের সমালোচনা সে কখনোই শুনতে চায়না। অন্যের প্রতি সহানুভূতি দেখায় না। সূচনা কারো সাথে দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক তৈরি করতে ও তা রক্ষা করতে পারেনা। তার পরিবার দীর্ঘ সময় ধরে সূচনার মধ্যে বিষয়গুলো দেখেছে এবং তাকে একজন সাইকোলজিস্টের কাছে নিয়ে যায়। সেখান বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে তারা জানতে পারে যে সূচনা নার্সিসিস্টিক পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত।
আজকালকার দিনে মানুষের মধ্যে নার্সিসিস্টিক পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার (NPD) বা আত্মমুগ্ধতাসূচক ব্যক্তিত্ব ব্যাধি প্রবলভাবে বেড়ে চলছে। নার্সিসিস্ট ট্রেইটগুলো যখন ব্যাক্তির মধ্যে স্থায়ী ও একরোখা থাকে, মনস্তাত্বিক বিকাশ বাধাগ্রস্থ করে এবং ব্যাক্তির কাজে ক্ষতি করে তখন তাকে নার্সিসিস্টিক পার্সোনালিটি ডিসঅরডার(NPD) বলা হয়। NPD নির্ণয় করা হবে তখন যখন ব্যাক্তির মধ্যে নিম্নোক্ত পাঁচ বা তার অধিক লক্ষণগুলো প্রকাশ পাবে। এগুলো হলো-
০১। নিজেকে খুব বেশি গুরুত্ব দেওয়া।
০২। ক্ষমতা, সাফল্য, সৌন্দর্য, শক্তি ইত্যাদি পাওয়ার মোহে আচ্ছন্ন থাকা।
০৩। অন্যের আবেগ-অনুভূতি, প্রয়োজনকে স্বীকার করতে না চাওয়া।
০৪। নিজেকে খুবই স্পেশাল মনে করা এবং শুধু উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন মানুষ/প্রতিষ্ঠান তাকে বুঝতে পারে এরকম ধারনা পোষণ করা।
০৫। অহংকারী, উদ্ধত আচরণ প্রকাশ করা।
০৬। নিজেকে ভুল-ত্রুটির ঊর্ধ্বে মনে করা এবং নিজের ভুলটাকেও সঠিক বলে চালিয়ে দিতে চাওয়া।
০৭। আত্ম-সমালোচনা সহ্য করতে না পারা।
০৮। অন্যের দৃষ্টিকোণ থেকে চিন্তা করতে না পারা।
০৯। যেকোনো আড্ডা বা সমাবেশে নিজেকে কেন্দ্রবিন্দুতে রাখতে চাওয়া।
১০। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে না চাওয়া।
১১। প্রতিহিংসাপরায়ণ ও অনুভূতিহীন হওয়া।
১২। অত্যধিক প্রশংসা পাওয়ার উচ্চ বাসনা।
১৩। অন্যের ওপর কর্তৃত্ব ফলাতে চাওয়া ও ক্ষমতা দেখাতে চাওয়া।
১৪। বাস্তবতা সম্পর্কে কম ধারণা রাখা।
নার্সিসিস্টিক পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার (NPD) পরিবেশ, সমাজ ও জিনগত কারণে হতে পারে। ছেলেদের মধ্যে মেয়েদের তুলনায় এটি বেশি দেখা যায়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে ছোটবেলায় যেসব বাচ্চা বাবা-মায়ের কাছে অবহেলিত হয় এবং অনেক শাসনে থাকে, বড় হয়ে তাদের মধ্যে NPD দেখা দিতে পারে। এছাড়া ছোটবেলা থেকে যেসব বাচ্চা খুব বেশি পজেটিভ ব্যবহার (আশকারা) পেয়ে থাকে বিভিন্ন ভুল-ভ্রান্তি করা সত্ত্বেও; তাদের মধ্যে এই ডিসঅর্ডারটি দেখা দিতে পারে।
ট্রিটমেন্ট-
সাইকোথেরাপি, ট্রান্সফারেন্স-ফোকাসড, মেটাকগনেটিভ থেরাপির মাধ্যমে কোনো ব্যক্তিকে তার প্রকৃত ব্যক্তিত্ব, গুণাবলি, ক্ষমতা বুঝতে সাহায্য করা হয়। NPD তে আক্রান্ত বেশিরভাগ ব্যাক্তি তাদের রোগ স্বীকার করতে চায়না। সাইকোডায়নামিক থেরাপিস্টরা এরকম মানুষকে তার সমস্যাগুলো বুঝাতে সাহায্য করে এবং তার দুর্বলতা ও প্রতিরোধ নিয়ে কাজ করে।
আমাদের পরিবার বা বন্ধুমহলে এমন মানুষ হয়তো আছে যারা এই নার্সিসিস্টিক পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডারে ভুগছে। সবার সাহায্য ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবাই পারে তাদেরকে এই ডিসঅর্ডার থেকে বের হয়ে আসতে এবং সহানুভূতিশীল ও সুন্দর জীবন গড়ে তুলতে সাহায্য করতে।
অন্তরা অন্তু