প্রেসার কুকার

Share

“অনেক প্রেসারে আছি ভাই” লাইনটি আমরা প্রায়ই ব্যবহার করে থাকি। হোক সেটি কাজের প্রেসার কিংবা পরীক্ষার প্রেসার; আমরা মূলত আমাদের চারপাশের বিভিন্ন ঘটনাবলীর সম্মুখীন হয়ে স্ট্রেস বা চাপ অনুভব করে থাকি। স্ট্রেস শব্দটি আমাদের অতি পরিচিত। প্রতিটি মানুষই কোনো না কোনো সময় স্ট্রেসের সম্মুখীন হয়ে থাকেন। স্ট্রেস হচ্ছে মানবদেহের অভ্যন্তরীণ একটি অবস্থা যা কিনা শারীরিক চাহিদা কিংবা আশেপাশের পরিবেশ এবং সামাজিক পরিস্থিতির কারণে সৃষ্টি হয়ে থাকে। ব্যক্তি যদি স্ট্রেসের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন তবে সেটি ব্যক্তির শারীরিক এবং মানসিক উভয়ক্ষেত্রের জন্যই ক্ষতিকারক হিসেবে নিজেকে প্রকাশ করে।

আমাদের প্রতিদিনের কাজকর্ম কিংবা আশেপাশের পরিবেশের সাথে আমরা মানিয়ে চলার চেষ্টা করি। যখন আমরা কোনো একটি সিচুয়েশনের সাথে সম্পূর্ণভাবে নিজেদের মানিয়ে নিতে ব্যর্থ হই তখনই আমরা স্ট্রেস অনুভব করে থাকি। স্ট্রেস উৎপাদনকারী ঘটনাসমূহকে স্ট্রেসর হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়। মানুষের জীবনের প্রতিটি ছোট কিংবা বড় ঘটনাই স্ট্রেসর হিসেবে কাজ করতে পারে। যেমন কোনো দুর্ঘটনা কিংবা রোগব্যাধি,  প্রাকৃতিক দূর্যোগ, জীবনের বিশেষ কোনো পরিবর্তন, উচ্চমাত্রার শব্দ, স্কুল-কলেজ কিংবা অফিসের কাজকর্মের চাপ যেকোনো কিছুই আমাদের স্ট্রেস অনুভব করার জন্য দায়ী।

স্ট্রেসকে মূলত দুইভাগে ভাগ করা হয়; Eustress (ইউস্ট্রেস) বা পজেটিভ স্ট্রেস এবং Distress (ডিস্ট্রেস) বা নেগেটিভ স্ট্রেস।  এই পজেটিভ স্ট্রেস আমাদের জীবনে মোটিভেটর হিসেবে কাজ করতে পারে এবং নেগেটিভ স্ট্রেস হতাশাজনক পরিস্থিতির দিকে ইঙ্গিত করে। আমরা প্রতিনিয়ত স্ট্রেস জিনিসটিকে নেগেটিভ ভাবেই দেখে থাকি। আমাদের মধ্যে এই স্ট্রেস থাকাটাই কিন্তু স্বাভাবিক; কিন্ত খেয়াল রাখতে হবে সেই স্ট্রেসটা যেন পরিমিত পর্যায়ে থাকে। বেশি স্ট্রেসড হলে আমাদের নিত্যদিনের কাজ কর্মে ব্যাঘাত ঘটে। আবার অনেক সময় একদমই স্ট্রেস না থাকাটা আমাদের যেকোনো কাজে ডিমোটিভেট করতে যথেষ্ট। আমরা বলছিনা প্রোডাক্টিভিটি আনতে জোর করে স্ট্রেস আনতে হবে। অনেকেই আছেন যারা স্ট্রেসে থাকলে কাজ ভালো করেন। আবার অনেকে স্ট্রেসড না থাকলেই কাজে ভালো বোধ করেন। বিজ্ঞানীরা এই অপটিমাম স্ট্রেস লেভেল কে একটি গ্রাফের সাহায্যে বোঝানোর চেষ্টা করেন।

এখানে দেখানো হয় স্ট্রেস কিভাবে প্রোডাক্টিভিটি অর্থাৎ উৎপাদনের সাথে জড়িত। স্ট্রেস যত কম থাকে, মোটিভেশন তত কম থাকে, ফলে কাজ অথবা উৎপাদন ক্ষমতা কমে যায়। আবার স্ট্রেস বেশি হলে মোটিভেশন এর বদলে হতাশ মনোভাবের সৃষ্টি হয়ে সমস্ত কাজটিকেই বিগড়ে দেয়। বিজ্ঞানীরা গ্রাফটির মাধ্যমে দেখানোর চেষ্টা করেছেন এই পরিমিত স্ট্রেস অনেকসময় একধরণের ভালো মোটিভেটর হিসেবে কাজ করে এবং ব্যক্তিকে প্রোডাক্টিভিটির দিকে ধাবিত করায়। পরিমিত স্ট্রেস আমাদের মধ্যে ঠিক যতটুকু টেনশন সৃষ্টি করে ঠিক ততটুকুই কাজটি সম্পূর্ণ করার জন্য মোটিভেট করতে থাকে। তখন আমরা কাজটি শুরু করি। সুতরাং বলা যায়, আমাদের জীবনে স্ট্রেস সম্পূর্ণ নেগেটিভ কোনো ফ্যাক্টরও নয়।

স্ট্রেসের সাথে আমরা সবচেয়ে বেশি যে শব্দটি শুনে থাকি তা হচ্ছে কোপিং (coping) বা মানিয়ে চলা। স্ট্রেস কোপিং বলতে আমরা বুঝি সেই সব পদ্ধতি যার ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা স্ট্রেসফুল সিচুয়েশন গুলোকে মোকাবেলা করতে পারি। সাইকোলজিস্টরা দুইটি প্রধান কোপিং টেকনিকের কথা উল্লেখ করেছেন। সেগুলো হলো-

  • ইন্সট্রুমেন্টাল কোপিং- এখানে ব্যক্তি স্ট্রেসর বা স্ট্রেস উৎপন্নকারী সমস্যাটির উপর বেশি নজর দেয় এবং সেটি সমাধান করার উপায় খুঁজতে থাকে। এখানে স্ট্রেস কিছুটা পজেটিভ দিকে মোড় নেয় এবং ব্যক্তিকে অনেক সময় সাহায্য করে সৃজনশীল সমাধান খুঁজে বের করতে।
  • ইমোশনাল কোপিং- এখানে ব্যক্তি সমস্যাটির চাইতে সেই সমস্যা দ্বারা উদ্ভুত চিন্তা এবং অনুভূতির দ্বারা বেশি প্রভাবিত থাকেন। ব্যক্তি তখন সমস্যা সমাধানের বদলে উক্ত অনুভূতি গুলোকে নিয়ে কাজ করেন কিংবা সম্পূর্ণ ভাবে এড়িয়ে যান। অনেকে এটিকে নেগেটিভ স্ট্রেসের কাতারে ফেলে থাকেন।

চাপ কমাতে বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করা যেতে পারে। আমাদের স্ট্রেসের কারণ আমরা কারো সাথে শেয়ার করার মাধ্যমে চাপমুক্ত থাকতে পারি। টাইম ম্যানেজমেন্ট করেও চাপমুক্ত থাকা যায় কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় সময়মত কাজ না শুরু করার ফলে আমরা চাপে পড়ে যাই। সময়ের কাজ সময়ে করলে স্ট্রেস থেকে অনেকখানি মুক্ত থাকা যায়। এছাড়া থেরাপিস্টরা সাধারণত রিল্যাক্সেশন এর উপর বেশি জোর দিয়ে থাকেন। ব্রিদিং এক্সারসাইজ, মেডিটেশন, মাইন্ডফুলনেস এর চর্চা করা ও স্ট্রেস থেকে বাঁচতে ভালো কাজে দেয়। এছাড়া সাইকোলজিস্টরা আরো অনেক স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট স্কিলের সাহায্যে ক্লায়েন্টদের সহায়তা করে থাকেন। -আশিক মাহমুদ

Loved this article? Share with your community and friends.

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share