বিষন্নতা বৃত্তান্ত

Share

খুব হাসিখুশি প্রাণবন্ত রাজীবের জীবন যেন হঠাৎ করেই থমকে গেছে। এক অদ্ভুত শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে তার মনে। সকালে ঘুম থেকে উঠলেও  রাজীব ঘন্টার পর ঘন্টা বিছানায় পড়ে থাকে। নানা অজুহাত‌ দেখিয়ে সে কয়েকদিন অফিসে যায়নি। তার খুব জরুরি প্রেজেন্টেশন ছিল আজকে অথচ তার মনেই নেই। অফিসের ম্যানেজারের ফোন পেয়ে রাজীবের মধ্যে খুবই হীনমন্যতাবোধ কাজ করছে। ফোনটা রেখে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রাজীব ভাবতে থাকে সে‌ হয়ত কোন কিছুরই যোগ্য না। রাজীবের সবচেয়ে কাছের বন্ধু অভি গত কয়েকদিন তাকে ফোন করছে কিন্তু রাজীব বারবার কেটে দিয়েছে। তার মনে অনেক কিছু বলার আছে অথচ কারও সাথে কথা বলতেও প্রচন্ড দ্বিধা হচ্ছে।  প্রতিদিন এভাবেই তার দিন চলে যাচ্ছে তীব্র মানসিক যন্ত্রণায়। অথচ কয়েক মাস আগেও রাজীবের অবস্থা এমন ছিল না‌।  একরকম জোর করেই অভি রাজীবকে সাইকোলজিস্ট এর কাছে নিয়ে যায়। রাজীবের গত কয়েক মাসের ঘটনার বিবরণ থেকে জানা গেল সে বিষন্নতায় ভুগছে।

বিষন্নতা কী?

বিষন্নতা বা ডিপ্রেশন ব্যাপারটি বেশ জটিল এবং এর প্রেক্ষাপট বিশাল। এটি একটি সাইকোলজিক্যাল ডিজঅর্ডার। ডিপ্রেশনকে মূলত দুই ভাগে ভাগ করা যায়- unipolar depression এবং bipolar disorder। সাধারণত ডিপ্রেশন বলতে আমরা Unipolar Depression কেই বুঝি। DSM-5 অনুযায়ী,‌ দুই সপ্তাহের অধিক সময় ধরে ব্যক্তির মধ্যে ক্রমাগত ডিপ্রশনের বিভিন্ন লক্ষণ দেখা দিলে ব্যক্তি ডিপ্রেশনে ভুগছে ধরা হয়। সময় ব্যবধান(duration) এবং লক্ষনের উপর ভিত্তি করে এর মাত্রা ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে।

ডিপ্রেশনের লক্ষণসমূহ

ডিপ্রেশনের লক্ষণগুলোকে পাঁচটি ক্ষেত্রে ভাগ করা যায়। প্রতিটি ক্ষেত্রেরই আলাদা আলাদা সাইকোলজিক্যাল টার্ম রয়েছে। বোঝার সুবিধার্থে এখানে প্রত্যেক ক্ষেত্রের কিছু উদাহরণ দেয়া হল।

১| ব্যক্তির মধ্যে নেতিবাচক আবেগ যেমন: কষ্ট, রাগ, উদ্বেগ

বেড়ে যায়। কোন কোন সময় ব্যক্তি হয়ত কোন কাজেই আর আনন্দ বা আগ্রহ খুঁজে পায়না।

২| ব্যক্তির মধ্যে কাজ করার অনুপ্রেরণা বা উদ্যোগ, স্বতঃস্ফূর্ত মনোভাব থাকেনা। এমনকি বন্ধু বান্ধবের সাথে কথা বলা বা ঘুরাফিরা করাও নানা অজুহাতে এড়িয়ে যায়।

৩| ব্যক্তির আচরণে স্পষ্ট পরিবর্তন আসে। তারা আগের মত কাজে মনোযোগ দিতে পারেনা। হঠাৎ করেই হয়ত আড্ডায় প্রাণবন্ত মানুষটি একা থাকা শুরু করে।

৪| ডিপ্রেশনে ভোগা মানুষ প্রায়ই হীনমন্যতায় ভোগে। অপরের তুলনায় নিজেকে ছোট মনে করে‌ আর নিজেকে নিয়ে হতাশায় ভোগে।

৫| ডিপ্রশনের কারণে মাথাব্যথা, মাথা ঘোরানো, খাওয়ায় অরুচি ইত্যাদি বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।

ডিপ্রেশন কেন হয়?

ডিপ্রেশন বিভিন্ন কারণে হতে পারে। ডিপ্রেশন হতে পারে সরাসরি জীবনের কোন ঘটনার কারণে এমনকি মানবদেহের হরমোনের কারণেও হতে পারে। সেরেটোনিন এবং নরএপিনেফ্রিন হরমোন নিঃসরণ কমে গেলে ব্যক্তির মধ্যে ডিপ্রেশন দেখা দিতে পারে। ছোটবেলার কোন দুঃসহ স্মৃতি মানুষের মনে জায়গা করে ফেললেও মানুষ ডিপ্রেশনে ভুগতে পারে। তাছাড়া আরও অনেক কারণে ব্যক্তি বিষন্ন হয়ে পড়ে যেমন: নেতিবাচক চিন্তা ধারনা, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে, সামাজিক চাপে  ইত্যাদি।

ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায়

ভিন্ন ভিন্ন মানুষের মধ্যে ডিপ্রেশনের কারণ যেমন ভিন্ন হয় তেমনি ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায়ও ব্যক্তি বিশেষে ভিন্ন ভিন্ন হয়। দক্ষ কাউন্সিলর এর সাথে নিজের সমস্যা আলোচনা করে এর সমাধান পাওয়া যেতে পারে। তাছাড়া নিজের নেতিবাচক চিন্তাগুলো ভালভাবে চিহ্নিত করে চিন্তায় ইতিবাচকতা আনতে হবে। ধীরে ধীরে বাইরের মানুষ আর পরিবেশে খাপ খাইয়ে নেয়ার চেষ্টা করতে হবে। বন্ধু নির্বাচনে সতর্ক হতে হবে। অনেক সময় বন্ধুদের সাথে শেয়ার করলেই সমাধান বেরিয়ে আসতে পারে আবার অনেক ‌সময় বন্ধুরাই বাঁকা কথার দ্বারা ব্যক্তির মধ্যে হীনমন্যতাবোধ সৃষ্টি করে। নিজের সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা আর আত্মবিশ্বাস গড়ে তুলতে হবে।

(সামিরা মাহজাবিন)

Loved this article? Share with your community and friends.

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share